ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) নতুন মাত্রা পেয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ ও রেললাইন দখল করে বিক্ষোভ দেখান চালকরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে জনগণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়।
মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় দুপুরে বিক্ষোভরত চালকদের সরিয়ে দিতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া দেন। তাদের ধাওয়ায় বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে সড়কের পাশের এলাকায় অবস্থান নেন।
ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা চালকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) হাইকোর্ট তিন দিনের মধ্যে রাজধানী থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা বেআইনি ঘোষণা করা হবে কিনা, তা জানতে রুল জারি করেন আদালত।
এই নির্দেশনার প্রতিবাদে বুধবার (২০ নভেম্বর) দয়াগঞ্জ মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন রিকশাচালকরা। তাদের বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর থেকে বিক্ষোভ আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেন অটোরিকশা চালকরা। মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় তারা রেললাইন দখল করে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন। তাদের অবস্থানের ফলে মহাখালীতে তীব্র যানজট তৈরি হয়। পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে বললে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন।
এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামেন। তারা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন। তবে বিক্ষোভকারীরা রেললাইন ছেড়ে পাশের সড়কে গিয়ে আবারো অবস্থান নেন।
মহাখালী ছাড়াও মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্ত্বর, আগারগাঁও, কল্যাণপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, এবং ডেমরা এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা সড়ক অবরোধ করেন। মিরপুর-১০ এলাকায় সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিলে তারা আশপাশের সড়কে অবস্থান নেয়।
চালকদের এ ধরনের বিক্ষোভে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট চরম আকার ধারণ করে। সাধারণ মানুষ এবং যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। জরুরি সেবা কার্যক্রমেও বিঘ্ন ঘটে।
এর আগে বুধবার দয়াগঞ্জ এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চালকরা। ওইদিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। চালকরা দাবি করেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম। এটি বন্ধ হলে তারা পরিবার নিয়ে চরম দুর্দশায় পড়বেন।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, ব্যাটারিচালিত রিকশা নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তবে চালকরা বলছেন, তাদের জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হচ্ছে, যা তাদের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
বৃহস্পতিবারের ঘটনায় রাজধানীজুড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপের পরও চালকদের বিক্ষোভ পুরোপুরি থামানো সম্ভব হয়নি। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা এবং চালকদের উদ্বেগ নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। অন্যথায়, এ ধরনের আন্দোলন আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে।