আজকের খবর

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যদের বেতন কত? তাদের কাজ কি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যদের বেতন কত? তাদের কাজ কি


মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত থেকে প্রাপ্ত ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’ নামের ছোট দুটি গানবোট এবং ৪৯ জন নাবিক নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

এরপর গত ৫০ বছরে আধুনিকায়নের পাশাপাশি বেড়েছে জনবল। বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে মোট চার ধরনের সদস্য রয়েছে। কর্মকর্তা, নাবিক, নিরাপত্তারক্ষী এবং বেসামরিক সদস্যগণ।

এসব পদে বর্তমানে প্রায় ১২০০ অফিসার, ১২ হাজার নাবিক এবং ২৫০০ বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকুরীরত আছেন। এক্ষেত্রেও অন্যন্য চাকরির মতোই যে যার পদ অনুসারে বেতন পেয়ে থাকেন। 

পদ অনুসারে নৌ বাহিনীর সর্বোচ্চ বেতন ৮৬ হাজার থেকে সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

একজন নৌ প্রধান বা অ্যাডমিরালের বেতন ৮৬ হাজার টাকা। ভাইস অ্যাডমিরাল পদমর্যাদার নৌ কর্মকর্তা  ৮২ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। 

পদক্রম অনুযায়ি ভাইস এডমিরালের পরেই রয়েছেন রিয়ার অ্যাডমিরাল, এ পদের একজন নৌ কর্মকর্তার বেতন ৭৮ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমডোর পদের বেতন ৬৩ হাজার ৫৭০ টাকা। ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার জন্য নির্ধারিত  বেতন হচ্ছে ৬১ হাজার টাকা।

একজন নৌ কমান্ডার মাস শেষে  ৫০ হাজার টাকা বেতন হিসেবে পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে একজন লেফটেন্যান্ট কমান্ডারের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার টাকা।


এছাড়াও অনারারি ক্যাপ্টেন ও অনারারি লেফটেন্যান্ট এবং অনারারি সাব লেফটেন্যান্ট যথাক্রমে ৪২ হাজার ৮৯০, ৩৮ হাজার ৪৮০ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। 

অন্যান্য পদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট  পদের বেতন হচ্ছে ২৯ হাজার,  সাব-লেফটেন্যান্টের বেতন ২৫ হাজার, এক্টিং সাব-লেফটেন্যান্ন্টের বেতন ২৩ হাজার ১০০ টাকা।

জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার বা জেসিও এর মধ্যে রয়েছে মাস্টার চিফ পেটি অফিসার,  সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার, সার্জেন্ট ও পেটি অফিসার। যাদের বেতন যথাক্রমে  ২২ হাজার ৫০০,  ২২ হাজার ২৫০  এবং ১৬ হাজার টাকা। 

বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর সুবেদার মেজর পদের বেতন ১৫ হাজার ৭০০ টাকা। সুবেদারের বেতন ১৪ হাজার ১২০ টাকা, নায়েক সুবেদার, কর্পোরাল, এলএস ও হাবিলদারের বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা।

এছাড়াও রয়েছে নায়েক, এলএসি ও এবি পদ, যাদের বেতন ১০ হাজার ২০০ টাকা, ল্যান্স নায়েক, ওডি এবং এসি-১ রিক্রুট পদের নির্ধারিত বেতন ৯ হাজার টাকা। 

পদের দিক দিয়ে সবচেয়ে নিম্নমানের পদ সিপাহি, রিক্রুট পদ, যাদের বেতন ধরা হয় ৮ হাজার ৮০০ টাকা।


বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে বিভিন্ন পদে আবেদনের জন্য শিক্ষাগত ও শারীরিক যোগ্যতা ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। সব পদের আবেদনকারীদের ক্ষেত্রেই সাঁতার জানা আবশ্যিক। 

চূড়ান্তভাবে নিয়োগকৃত প্রার্থীরা সশস্ত্র বাহিনীর বেতনক্রম অনুযায়ী বেতন ও ভাতা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়াও রয়েছে বিনা মূল্যে পোশাক, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসার, কম দামে পরিবারের জন্য রেশন ক্রয়ের সুবিধা।

অফিসার ও নাবিকদের প্রশিক্ষণের জন্য নৌবাহিনীতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ঘাঁটি রয়েছে। নৌ-প্রশিক্ষণের যুগান্তকারী উন্নয়নের ফলে সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালনে সক্ষম আন্তর্জাতিক মানের অফিসার ও নাবিক হিসেবে তৈরি হয়েছে। 

বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে অফিসারদের চার পর্বে মোট দুই বছর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

ক্যাডেট হিসেবে তারা ৬ সপ্তাহ এবং মিডশীপম্যান হিসেবে ছয় মাস জাহাজে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ লাভ করে।  প্রশিক্ষণ শেষে কমিশনপ্রাপ্ত নবীন অফিসারদের বিএসসি ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

পেশাগত তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হওয়ার পর অফিসারগণ জাহাজ থেকে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ লাভ করে। সকল শাখার অফিসারদের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে জুনিয়র স্টাফ কোর্সে অংশগ্রহণ করতে হয়। 

অন্যদিকে সকল শাখার নাবিকদের বানৌজা তিতুমীরে ছয় মাসের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে তারা নৌবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। 

এর মধ্যে সীমিত সংখ্যক যোগ্য নাবিককে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশেও প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দায়িত্ব দুটি ভাগে বিভক্ত। যুদ্ধকালীন দায়িত্ব ও শান্তিকালীন দায়িত্ব। 

যুদ্ধের সময় তাদের কাজ হচ্ছে সমুদ্র এলাকায় শত্রু মোকাবেলা, গ্যাস, তেল ও খনিজ সম্পদের মত সমুদ্রসম্পদ রক্ষা এবং সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সচল রাখা। 

যুদ্ধ না থাকলেও নৌসেনাদের অবসর নেই। শান্তির সময় তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে সাগরে চোরাচালান বিরোধী অভিযান, জলদস্যু বিরোধী অভিযান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মৎস্যসম্পদ রক্ষাসহ পরিবেশ দুষণ নিয়ন্ত্রন অভিযানে ব্যস্ত থাকেন। 

বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দেশের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা এবং দ্বীপাঞ্চলের মানুষের পাশেও দাঁড়ায়  বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

অন্যান্য দেশের উন্নত নৌবাহিনীর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন, বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম ও জাহাজ সংযোজন করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে দেশের সমুদ্রসীমা সুরক্ষায় নৌবাহিনীতে আধুনিক ২টি মেরিটাইম প্যাট্রোল এয়ারক্রাফট সংযোজন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অত্যন্ত বিপদ সংকুল এলাকায় জীবনের ঝুকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বিশ্বস্ততা, আন্তরিকতা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের সম্মান ও মর্যাদা সমুন্নত করেছে। 

বর্তমানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বিদেশে নিয়মিত শুভেচ্ছা সফরে গমন করছে। এতে নবীন অফিসার ও নাবিকদের পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্য দেশের নৌ-সদস্যদের সাথে বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়। 

বাংলাদেশ নৌবাহিনী তার সীমিত সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ ও জনবল নিয়ে বিশাল সমুদ্র এলাকায় অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। 

নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্য ‘শান্তিতে সংগ্রামে সমুদ্রে দুর্জয়’ এ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বহু কষ্টে অর্জিত বাংলাদেশের সেবায় নিবেদিত প্রাণ।