আজকের খবর

বাংলাদেশে তেল সরবরাহ করবে ব্রুনাই, বিনিময়ে নিতে চায় শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২
বাংলাদেশে তেল সরবরাহ করবে ব্রুনাই, বিনিময়ে নিতে চায় শ্রমিক

বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানী সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া জড়িয়েছে যুদ্ধে। ফলে বিশ্বব্যাপী কমেছে জ্বালানীর সরবরাহ। দাম ও বেড়েছে  অস্বাভাবিক গতিতে।

জ্বালানীর অভাবে ব্যাহত হচ্ছে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন। তাই এবারে দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনাই হতে জ্বালানী আমদানীর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

আকারে ছোট হলেও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও জ্বালানির মজুদ রয়েছে দেশটির অভ্যন্তরে। ব্রুনাইয়ের অর্থনীতি নির্ভরশীল এই সম্পদটি রফতানির উপর।

দেশটিতে গত বছর নতুন করে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রায় ৪২ বিলিয়ন ব্যারেল তেল। তেল নির্ভর দেশটির প্রয়োজন বিপুল পরিমান প্রবাসী শ্রমিক।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন ব্রুনাই সুলতান বলখিয়া। এই সফরে তরান্বিত হয়েছে ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশি শ্রমিক রফতানির পথ।

সুলতানের বাংলাদেশ সফরে তেল ও গ্যাস আমদানি এবং শ্রমিক রফতানি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সাক্ষরিত হয়েছে বেশ কয়েকটি চুক্তি। 

চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে চালু হবে বিমান সেবা। সেই সাথে বাংলাদেশি নাবিকদের প্রশিক্ষন দেবে ব্রুনাই। সুলতান আসার আগেই এই চুক্তির আভাস দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

দেশে বছরে ব্যাবহার হওয়া ৪৬ লাখ টন ডিজেলের ৮০ শতাংশই আমদানি নির্ভর। এই আমদানির প্রধান উৎস মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলো।

তবে রাশিয়ার জ্বালানী আমদানি করতে না পারায় অনেক দেশ ঝুকেছে মধ্যপ্রাচ্যের উপর। তাই এই উচ্চমুল্যের বাজারে ব্রুনাই এর সঙ্গে চুক্তি দেশীয় অর্থনীতির জন্যে সুসংবাদ।

২০১৯ সালেই হয়েছিল এমন চুক্তি, তবে মাঝে করোনার চাপে পড়ে ২০২১ সালে কোনরুপ আমদানি ছাড়াই সমাপ্ত হয় সে চুক্তির মেয়াদ। 

শুধু ডিজেল নয় বাংলাদেশ এখন আমদানি করতে চায় এলএনজিও। চুক্তি হয়ে যাওয়ায় জ্বালানী আমদানিতে এখন একমাত্র বাধা মুল্য নির্ধারন। যদি ব্রুনাই কম মুল্যে জ্বালানী সরবরাহে সক্ষম হয় তবে বাংলাদেশ শীঘ্রই আমদানি শুরু করবে। 

রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিশোধন সম্ভব নয় দেশে। তবে কম দামে পরিশোধিত রাশান তেল আমদানি করা গেলেও এব্যপারে মুখ খুলছে না সরকার। শিলিগুড়ি থেকে পার্বতিপুর অয়েল পাইপলাইন চালু হবে আগামী বছর।

তখন ভারত হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জ্বালানীর উৎস। তেল বাদে উচ্চ মাথাপিছুর আয়ের দেশ ব্রুনাইয়ের সাথে সাক্ষর হয়েছে শ্রমিক রফতানি চুক্তি। 

এর আগে ১৯৯০ সালে শ্রম রফতানি শুরু হলেও কখনোই বড় বাজার হয়ে উঠতে পারেনি দেশটি। বাংলাদেশের ৭৫ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন ব্রুনাইয়ে।

তবে এবারে কাটছে এই খরা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমিক রফতানির বাজার হতে চলছে ব্রুনাই। কারন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন থেকে শ্রমিক যাবে দেশটিতে।

অর্থনিতিবিদদের মতে দেশের অশিক্ষিত লোকেদের বিদেশ যাত্রার বড় গন্তব্য হতে পারে ব্রুনাই। তবে তাদের পরামর্শ যেন মালয়শিয়ার মত এই বাজার নষ্ট না হয়।

সাক্ষরিত নতুন চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে বেসরকারি উপায়েও শ্রমিক যেতে পারবে দেশটিতে। 

ব্রুনাই ভিশন ৩০ বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর সুলতান। সে লক্ষ্যে তাদের নির্মান শিল্পে রয়েছে বিশাল কর্মি চাহিদা। এছাড়া চীনা প্রকল্পেও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিতে চায় চীনা সরকার। 

বিশেষজ্ঞদের মতে এই শ্রম বাজারে প্রবেশ করা যতটা গুরুত্বপুর্ন, ঠিক ততটাই গুরুত্বপুর্ন শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত করে পাঠানো। 

তেল আমদানি এবং শ্রমিক রফতানির উদ্দেশে সাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক গুলো বাংলাদেশের অর্থনীতীতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই বিশ্বাস সকলের।