জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণ অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জেএসডি) নিয়ে গঠিত সম্ভাব্য নির্বাচনী জোটের ঘোষণা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। আলোচনার অগ্রগতি হলেও শেষ পর্যন্ত জোটের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। ফলে জোট গঠন হবে কি না—তা জানতে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার অপেক্ষা করতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগের শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে জোটের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের কথা থাকলেও বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত চলা বৈঠকে কয়েকটি বিষয়ে মতবিরোধ তৈরি হওয়ায় তা আর হয়নি।
সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলে সম্ভাব্য জোটের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় বেশির ভাগ নেতা জোটে যাওয়ার পক্ষে মত দিলেও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের উদ্যোগে গঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘আপ বাংলাদেশ’কে জোটে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবে তীব্র আপত্তি তোলে এনসিপির একটি বড় অংশ। মূলত এই মতপার্থক্য জোট গঠনের আলোচনায় বাধা সৃষ্টি করে।
এরপর রাত ১০টা থেকে বাংলামোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে এনসিপি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়।
এনসিপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম এবং মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
গণ অধিকারের পক্ষ থেকে ছিলেন সভাপতি নুরুল হক নূর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান এবং দলের শীর্ষপর্যায়ের আরও কয়েকজন নেতা।
বৈঠকে গণ অধিকার পরিষদের নেতারা জোটের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা সম্পর্কে জানতে চান। এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়—রূপরেখা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গণ অধিকারের কয়েকজন নেতা তড়িঘড়ি করে জোট ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এমনকি দল দুটি একীভূত করার প্রস্তাবও আলোচনায় আসে বলে বৈঠক-সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন।
রাত একটার দিকে আলোচনায় যোগ দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম। গভীর রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত আলোচনা চললেও কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়।
আজ সকালে এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন গণমাধ্যমে এক বার্তায় জানান, আজ জোট ঘোষণার কোনো পরিকল্পনা নেই। আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সিদ্ধান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
বৈঠকে উপস্থিত এক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা জানান,
দুটি কারণে জোট গঠনের প্রক্রিয়া ঝুলে গেছে—
১. আপ বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে এনসিপির নেতিবাচক অবস্থান
২. গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের মধ্যে জোট নিয়ে মতবিভেদ
জোটে যুক্ত থাকা দলগুলোর নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, আলোচনা এখনো খোলা রয়েছে। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন— পাঁচ দলের সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের আলোচনা এগোচ্ছে। এটি নির্বাচনী জোটে রূপ নিতে পারে। তবে জোট হলে তা অবশ্যই তফসিল ঘোষণার আগেই হবে।