জাতীয়

৩৬৫ দিন নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪
৩৬৫ দিন নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর ২০২৪) ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের সময় বলেছেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ৩৬৫ দিন নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। এটি অক্ষুণ্ণ থাকবে এবং দেশের প্রতিটি মানুষ নিরাপদে থাকতে পারবে।” তিনি আশ্বাস দেন যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা সতর্ক রয়েছে।
পূজার সময় নিরাপত্তা নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে, পুলিশ, বিজিবি, আনসার এবং র‍্যাবসহ অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনী পূজামণ্ডপে মোতায়েন করা হয়েছে। যেসব স্থানে অতিরিক্ত বাহিনী দরকার, সেখানে সেই অনুযায়ী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি আশা করবো, এবারের পূজা খুব ভালোভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
উল্লেখ্য, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে জাহাঙ্গীর আলম পূজা কমিটির মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলেন। মহাসচিব তাঁকে আশ্বস্ত করেন যে, পূজা কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অশান্তি বা ঘটনার আশঙ্কা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি আছে এবং পূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে।
৮ দফা নির্দেশনা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পূজার জন্য বিশেষ ৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বাধ্যতামূলক এবং তারা তা অনুসরণ করবে বলে উপদেষ্টা জানান। তিনি আরও বলেন, “যে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার প্রচেষ্টা সঙ্গে সঙ্গেই মোকাবিলা করা হবে এবং জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন সেন্টারকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে খবর পৌঁছানো যায়।”
এই ৮ দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে:
  1. প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসিটিভি স্থাপন।
  2. জরুরি যোগাযোগের জন্য হটলাইন নাম্বার চালু করা।
  3. পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার করা।
  4. পূজামণ্ডপের আশেপাশে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ।
  5. আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা তল্লাশি।
  6. মণ্ডপের আশেপাশের রাস্তা পরিষ্কার রাখা।
  7. অপরিচিত ও সন্দেহজনক প্যাকেজ বা বস্তু সম্পর্কে সজাগ থাকা।
  8. জরুরি পরিস্থিতিতে মণ্ডপের কমিটির সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয় রাখা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝে মাঝে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে, তবে তার পরিমাণ খুবই কম এবং এর জন্য আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, “পূজা কমিটির মহাসচিব আমাকে জানিয়েছেন, পূজা কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই এবং সবকিছু সুষ্ঠুভাবে চলছে।”
তিনি এও জানান যে, দেশের সকল মানুষ যদি সহযোগিতা করে, তাহলে বাংলাদেশে সব ধর্মাবলম্বীরা নিরাপদে ও শান্তিতে তাদের উৎসব পালন করতে পারবে। পূজার সময় কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় তা নিশ্চিত করতে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। এছাড়া, সামাজিক মাধ্যমে কেউ যেন উসকানিমূলক বা বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়ায়, সে বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে।
এই বছর পূজার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন সেন্টারকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে খবর পাওয়ার জন্য তাদেরকে বিশেষ প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাদের লক্ষ্য থাকবে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ এবং তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পৌঁছানো।
উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সবাইকে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আপনাদের সহযোগিতাই আমাদের কাজকে সহজ করে। পূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে যদি সবাই দায়িত্বশীল ও সচেতন থাকে।”
দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সহাবস্থান এবং পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। পূজা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও এর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা সবার দায়িত্ব।”
বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় উৎসব দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে পালনের জন্য সরকার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনী পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। ৮ দফা নির্দেশনা মেনে চলার মাধ্যমে এবারের পূজা উৎসব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।