জাতীয়

১১ কোটি নাগরিকের তথ্য চুরি, জয়-পলকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪
১১ কোটি নাগরিকের তথ্য চুরি, জয়-পলকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বাংলাদেশে ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির একটি ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ আরও ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের ডেটা সেন্টার থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ৪৬ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্যের মিরর কপি চুরি ও বিক্রির ঘটনা। গ্রেফতারকৃত একজন হচ্ছেন ডাটা সেন্টারের সাবেক পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ, যাকে বুধবার সকালে রাজধানীর কাফরুল থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি মঙ্গলবার রাতে কাফরুল থানায় এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, এই বিশাল তথ্যভান্ডারের চুরি এবং বেআইনিভাবে তথ্য হস্তান্তরের সাথে সজীব ওয়াজেদ জয়, জুনাইদ আহমেদ পলকসহ আরও অনেকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। মামলার তথ্য মতে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল, যার আওতায় বিসিসি নির্বাচন কমিশনের তথ্য সংরক্ষণ করবে এবং তা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পারবে না।
কিন্তু অভিযোগ অনুসারে, বিসিসি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে 'ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিস লিমিটেড' নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে এই তথ্যসমূহের মিরর কপি হস্তান্তর করে। এই প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীতে 'পরিচয়' নামক একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ১৮০ টিরও বেশি দেশি-বিদেশি এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ওই তথ্য বিক্রি করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ১১ কোটিরও বেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য বিসিসিকে প্রদান করা হয়েছিল। তবে বিসিসি এই তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকলেও তারা বেআইনিভাবে ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিস লিমিটেডকে এই তথ্য প্রদান করে। ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে চক্রটি এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে প্রবেশ করে এবং এর অনুলিপি তৈরি করে বিক্রি করে।
এই তথ্যচুরি এবং বিক্রির কারণে, ১১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে, যা তাদের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নাম, ঠিকানা, এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য।
ডিজিকন গ্লোবাল সার্ভিস লিমিটেডের মাধ্যমে এই তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে, এবং এর ফলে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই তথ্যগুলো স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি হয়েছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ বা ডিজিটাল প্রতারণা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, এই মামলায় মোট ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং জুনাইদ আহমেদ পলক আছেন। এছাড়াও আরও ১৫ থেকে ২০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।
এই মামলার তদন্ত চলছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চুরি হওয়া তথ্য এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এটি বাংলাদেশের তথ্য নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাকে নাড়া দিয়েছে।