জাতীয়

একজন প্রাইমারি শিক্ষকের বেতন কত?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩
একজন প্রাইমারি শিক্ষকের বেতন কত?
মানুষ গড়ার কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখা এক মহান পেশার নাম শিক্ষকতা, যার অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাংলাদেশের প্রাথমিক স্কুল গুলোতে শিক্ষকতার একাধিক পদ থাকে, এর মধ্যে রয়েছে সহকারী শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ইত্যাদি।  অন্যান্য সরকারী চাকুরীজীবীদের মতো প্রাইমারি শিক্ষকরাও বেতন ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা পেয়ে থাকেন। 

চাকরির শুরুতেই সরকারী প্রাইমারি স্কুলের একজন সহকারি শিক্ষকের বেতন হয় ১৩ তম গ্রেডে। যেখানে শুধুমাত্র বেসিক বেতন থাকে ১১ হাজার থেকে ২৬ হাজার ৫৯০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ চাকরির শুরুতে বেসিক বেতন হবে ১১ হাজার টাকা, এরপর সময়ের সাথে সাথে বেড়ে দাঁড়াবে ২৬ হাজার ৫৯০ টাকা পর্যন্ত।  টাকার এই অংক শুধুমাত্র বেসিক বেতন। এর বাইরে বিভিন্ন ধরণের ভাতা রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমেই আসে বাড়ি ভাড়া। ঢাকা সিটি এলাকার প্রাইমারি সহকারী শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া পান মূল বেতনের ৬০ শতাংশ, অর্থাৎ কমপক্ষে ৬ হাজার ৬০০ টাকা। অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সহকারী শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ৫০ শতাংশ।  

এর বাইরে দেশের বাকিসব অঞ্চলের জন্য বাড়ি ভাড়ার পরিমাণ মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ।  সহকারী শিক্ষকদের অন্যান্য নিয়মিত ভাতার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা, টিফিন ভাতা ২০০ টাকা, এবং যাতায়াত ভাতা ৩০০ টাকা। এই হিসাবে চাকরির একদম শুরুতে প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের মোট বেতন হয় ঢাকা সিটি এলাকায়  ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যান্য সিটি এবং সাভার পৌর এলাকায় মোট ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। এর বাইরে অন্যান্য অঞ্চলের শিক্ষকদের মোট বেতন ১৭ হাজার ৯৫০ টাকা। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবছর বেতন বৃদ্ধি পায় ৫ শতাংশ, বা ৫৫০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য চাকুরীজীবীদের মতো বছরে দুটি উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন সহকারী শিক্ষকরা। টাকার অংকে সেগুলো হয়ে থাকে মূল বেতনের সমপরিমাণ। 

পাশাপাশি বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতিবছর বৈশাখী ভাতা দেয়া হয় মূল বেতনের ২০ শতাংশ, অর্থাৎ কমপক্ষে ২২০০ টাকা। এর বাইরে চাকরির তিন বছর পূর্ণ হবার পর বিনোদন ভাতা পাওয়া যায়। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সন্তান সন্ততি থাকলে তাদের জন্য শিক্ষা ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষা ভাতা হিসাবে এক সন্তানের জন্য ৫০০ এবং দুই সন্তানের জন্য ১ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। চাকরী জীবনে সহকারী শিক্ষকরা পদোন্নতি পেয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক পদে যেতে পারেন, তবে এরকম পদোন্নতির হার খুব বেশি নয়। 

সহকারী শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে শিক্ষা খাতের অন্যান্য কিছু পদেও যেতে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং পিটিআই ইনসট্রাক্টর ইত্যাদি।  তবে এসব পদে যাওয়ার জন্য নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।  বেতন ভাতা এবং পদোন্নতি ছাড়াও আরো কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন সহকারী শিক্ষকরা। চাকরি জীবনে অসুস্থ হলে তাদের সহায়তার জন্য কল্যাণ তহবিল রয়েছে।নিজের সন্তানের চাকরির জন্যেও এই পদে সহায়তা পাওয়া যায়। কারণ প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা রয়েছে। 

এছাড়া যোগ্যতা অনুযায়ী এক বছর পর্যন্ত বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ পান প্রাথমিক শিক্ষকরা, যার খরচ দিয়ে থাকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। নির্ধারিত মেয়াদে চাকরির পর অবসর নিলেও বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা। অবসরের পর তাদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা রয়েছে, যার পরিমাণ মূল বেতনের ২৩০ গুণ।

এছাড়া চাকরি শেষে ১৮ মাসের বেতনের সমপরিমাণ ল্যামগ্রান্ড এবং এক বছরের পিআরএল দেয়া হয়ে থাকে।এর বাইরে ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত মাসিক দেড় হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা প্রদান করা হয়, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য চিকিৎসা ভাতার পরিমাণ আড়াই হাজার টাকা।