জাতীয়

পাগলা মসজিদে কোটি কোটি টাকা দানের রহস্য কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০২২
পাগলা মসজিদে কোটি কোটি টাকা দানের রহস্য কী?

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:


কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। ২০০ বছরের পুরোনো এই স্থাপত্যটির প্রতি পর্যটকদের যেমন রয়েছে তীব্র আকর্ষণ, তেমনি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরও এর প্রতি রয়েছে অগাধ বিশ্বাস। শুধুমাত্র যে সৌন্দর্যের জন্য এই মসজিদটির খ্যাতি রয়েছে তা কিন্তু নয়। মাত্র তিনমাসে এখানকার দানবাক্সে জমা পড়ে কোটি কোটি টাকা, স্বর্ণালংকার ও হীরা। যা একেবারেই বিরল ঘটনা।


তিন মাস পর পর যখনই মসজিদটির দান বাক্স খুলে টাকা গননা করা হয়, তখনই তা অতীত ইতিহাসের রেকর্ড ভাঙে আর নতুন রেকর্ড গড়ে। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা দান করেন সাধারণ মানুষ। শুধু টাকা-পয়সা নয়, সোনাদানার পাশাপাশি দান করা হয় গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী।


কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকার নরসুন্দা নদীর তীরে ২০০ বছর আগে নির্মাণ করা হয় পাগলা মসজিদ। দৃষ্টিনন্দন মসজিদের চত্বরজুড়ে সরাদিনই থাকে সাধারণ নারী-পুরুষের ভিড়। মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার বিশ্বাসে মসজিদে দান করছেন টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী।


চার মাসে জমেছে প্রায় ৪ কোটি টাকাঃ


করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার চার মাস ৬ দিন পর গতকাল শনিবার খোলা হয় মসজিদটির দান বাক্স। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দান বাক্স খুলে তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া ডলার, পাউন্ড, রিয়াল, রিঙ্গিতসহ বিভিন্ন দেশীয় অর্থ স্বর্ণালংকার ও হীরা পাওয়া গেছে।


সকাল ৯ টার দিকে মসজিদের বাক্স খোলার পর রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত টাকা গণনা শেষে এই হিসাব পাওয়া যায়। দান বাক্সের টাকা ১৫টি বস্তায় ভরে প্রায় দুই শতাধিক লোক দিনব্যাপী গননার কাজ করেন। এতে মসজিদ মাদরাসার ছাত্র শিক্ষক, রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আনসার এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা অংশ নেন।


গত ৬ নভেম্বর দান সিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন সর্বোচ্চ তিন কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। গতবারের তুলনায় এবার ৭১ লাখ ৩৫ হাজার ৭ ১০ টাকা বেশী পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।


কেন এত টাকা জমা পড়ে পাগলা মসজিদে?


এই মসজিদের কথা উঠলেই মানুষের মনে প্রথম যে প্রশ্ন জাগে সেটি হলো- কেন এতো দান জমা পড়ে এই মসজিদে? স্থানীয়রা বলছেন, এই মসজিদে যারা আসেন সবাই দু’হাত খুলে দান করেন। শুধু মুসলমান নয়, অন্যান্য ধর্মের লোকজনকেও এ মসজিদে দান করতে দেখা যায়। এটি দেশের অন্যতম বিত্তশালী মসজিদ।


মানুষের বিশ্বাস, কোনও আশা নিয়ে একনিষ্ঠ মনে এ মসজিদে দান করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। রোগ-শোক ছাড়াও বিভিন্ন উপলক্ষে মানুষজন এ মসজিদে মানত করে দান করেন। যুগ যুগ ধরে এ বিশ্বাস থেকেই মানুষ মসজিদটিতে দান করছেন।


মসজিদের জমা পড়া দানের টাকা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।


কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল ইসলাম বলেন, এটি আসলে দেখার মতো ঘটনা। মানুষ তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য এখানে কোটি কোটি টাকা দান করেন। থাকে স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রাও। টাকা-পয়সার সঙ্গে চিঠিপত্রও থাকে। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিগুলোতে নিজেদের অভাব, অভিযোগ, রোগমুক্তি ও মনোবাসনার কথা থাকে।