চীন তার দেশে ২০০টিরও বেশি নতুন বিশেষ বন্দিশালা নির্মাণ করেছে, যা ‘লিউঝি কেন্দ্র’ নামে পরিচিত। এই কেন্দ্রগুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কড়া অবস্থানের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব বন্দিশালায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছয় মাস পর্যন্ত আটক রাখা যায়, যেখানে তাদের পরিবার বা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি নেই।
শি জিনপিং ২০১২ সালে ক্ষমতায় আসার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে তার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। তৃতীয় মেয়াদে এ প্রচারাভিযান আরও তীব্র হয়েছে। লিউঝি ব্যবস্থা চালু করা হয় ২০১৮ সালে, যা পূর্বের বিতর্কিত ‘শুয়াংগুই’ ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে। নতুন এই বন্দিশালাগুলোতে সর্বক্ষণিক নজরদারি, গদিযুক্ত দেয়াল এবং কঠোর প্রহরার ব্যবস্থা রয়েছে।
লিউঝি কেন্দ্রগুলোতে শুধু কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকর্তাই নয়, সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারদেরও আটক করা হয়। সাম্প্রতিক উচ্চ-প্রোফাইল মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ ব্যাংকার বাও ফ্যান এবং ফুটবল তারকা লি টাই-এর নাম। লি টাই দুর্নীতির দায়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন।
২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চীনে ২১৮টিরও বেশি লিউঝি কেন্দ্র নির্মাণ বা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর পর এই নির্মাণ কাজ আরও দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হয়েছে।
সমালোচকরা লিউঝি কেন্দ্রগুলোকে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের একটি মাধ্যম হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এক আইনজীবী জানান, বন্দিদের মানসিক ও শারীরিক চাপের মধ্যে রাখা হয়। এক প্রাক্তন কর্মকর্তার মেয়ে অভিযোগ করেছেন, তার বাবাকে ছয় মাস ঘুমাতে দেওয়া হয়নি এবং প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা সোজা বসে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে ঘুষ আদায়ের অভিযোগও উঠেছে। সমালোচকরা বলছেন, এই ব্যবস্থা ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করছে এবং মানবাধিকারের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করছে।
চীন সরকার একটি নতুন আইন সংশোধনী প্রস্তাব করেছে, যা তদন্ত পদ্ধতিকে ‘আইনসম্মত ও সভ্য’ করার কথা বললেও বন্দিদের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি দেয় না।
অনেকেই মনে করছেন, লিউঝি কেন্দ্রগুলোর এই ব্যবস্থাপনা চীনের অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা এবং জোরপূর্বক অর্থ আদায়ের ঘটনা বিনিয়োগ পরিবেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
চীনের এই পদক্ষেপ তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করলেও, আন্তর্জাতিক মহলে এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।