জাতীয় নাগরিক কমিটিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের পর জনপ্রিয় উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন তার লাইভ টক শো “ঠিকানা”-তে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনার শুরুতেই খালেদ মুহিউদ্দীন অভিযোগ করেন, "একটি প্রশ্ন করার জন্য আমাকে শেখ হাসিনা স্টাইলে পাঁচটি ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে।" তিনি বলেন, যারা বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে, তাদের ওপর ফ্যাসিবাদ সমর্থনের অভিযোগ তোলা হয়। তিনি তার কর্মজীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, “আমি বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকলেও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছি এবং ফিরে এসেছি। তবে এই ধরনের ট্যাগিং সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “সব ঘটনাই প্রীতিকর নয়। তবে বাংলাদেশের মানুষ এখন আগের তুলনায় বেশি কথা বলতে পারছে, যা ইতিবাচক। তবে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা এখনও হুমকির মুখে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। তিনি তার বই “Autocrats Rise” এবং “Voting in a Regime” সম্পর্কে বলেন, যা বিদেশি প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে কারণ ঢাকার কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তা ছাপানোর সাহস দেখায়নি।
আলোচনার এক পর্যায়ে খালেদ মুহিউদ্দীন উল্লেখ করেন, "রূপপুর বালিশকাণ্ড বা স্বর্ণের মধ্যে খাদ, এই সব তথ্য গণমাধ্যমের মাধ্যমেই জনগণ জেনেছে। তাই বলা যাবে না যে গণমাধ্যম কিছুই করছে না।" আলী রীয়াজ একমত হয়ে বলেন, “কিছু গণমাধ্যম চেষ্টা করেছে, তবে পুরোপুরি স্বাধীনতা এখনও নিশ্চিত হয়নি।”
রিয়াজ আরও বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অভাব ফ্যাসিবাদের ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশে ২০১৪, ২০১৮, এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা সীমিত ছিল। এটি সরকারের লেজিটিমেসি নিয়ে প্রশ্ন তোলে।”
গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়। রিয়াজ বলেন, “আগে গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা করা কঠিন ছিল। কিন্তু বর্তমানে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেলেও পুরোপুরি স্বাধীনতা এখনও অনুপস্থিত।”
আলোচনার শেষ দিকে রিয়াজ বলেন, “পরিবর্তন হয়েছে, তবে তা পুরোপুরি বা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় নয়। সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।”
এই টক শোতে উঠে আসা বক্তব্যগুলো বর্তমান পরিস্থিতি এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর আলোচনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।