ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য ইসরাইল একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সা’র এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হুথিরা শুধু ইসরাইল নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাদের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করা প্রথম এবং মৌলিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসরাইলের এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে হুথিদের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ। তারা ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে। হুথিদের দাবি, এসব হামলা গাজায় লড়াইরত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে। গত শনিবার ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে তেল আবিব-জাফা এলাকায় আঘাত হানে, এতে ১৪ জন আহত হন।
ইসরাইলের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, এবং নিউ জিল্যান্ডসহ একাধিক দেশ হুথিদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তবে ইসরাইল এই প্রচারণা আরও বিস্তৃত করতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনে সক্রিয় হয়েছে।
হুথিদের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে ইরান। ২০১৪ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান তাদের সমর্থন বাড়িয়ে দিয়েছে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইরান হুথিদের সমুদ্র মাইন, ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোনসহ উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করছে। হুথিদের এই শক্তি লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
সম্প্রতি লোহিত সাগরে হুথিদের ড্রোন এবং জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে অনেক বাণিজ্যিক জাহাজকে তাদের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হতে হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যয় বৃদ্ধি করেছে এবং বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির শঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে।
হুথিদের এই কার্যকলাপ ইরানের "অ্যাক্সিস অব রেসিস্ট্যান্স"-এর অংশ। এটি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও জায়নবাদের বিরুদ্ধে গঠিত একটি সামরিক জোট, যার অংশ হিসেবে ইয়েমেনের হুথিরা ইরানের আস্থাভাজন হিসেবে কাজ করছে। গাজায় হামাস এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর মতো, হুথিরা ইরানের আঞ্চলিক কৌশলগত পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
যদিও হুথিদের হামলা ইসরাইলের জন্য এখনো বড় কোনো সামরিক হুমকি হয়ে ওঠেনি, তাদের প্রযুক্তি এবং সামরিক কৌশল লোহিত সাগর এবং আশপাশের অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। ইসরাইল এই হুমকি মোকাবিলায় তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের নিয়ে কাজ করছে।