বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে শাহরুখ-দীপিকা জুটি মানেই যেন নতুন কোনো চমক। তাদের নিয়ে দর্শকদেরও থাকে বাড়তি প্রত্যাশা।
তিন খানের হাত ধরে এই ইন্ডাস্ট্রির অনেক নায়িকার ক্যারিয়ার বদলেছে। এমন অভিনেত্রীর নজিরও কম নয়, যারা খানদের হাত ধরে অভিষেকেই বাজিমাত করেছেন।
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় তারকা, দীপিকা পাডুকোনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। পরপর ৩টি সিনেমায় শাহরুখের নায়িকা হয়ে সফলতার মুখ দেখেন তিনি।
প্রকাশ পাড়ুকোনের কন্যা দীপিকার কৈশোর কেটেছে, শাহরুখ অভিনীত ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ এর মতো সিনেমা দেখে।
অন্য আর পাঁচ জন কিশোরীর মতো তাঁর বেড়ে ওঠার সঙ্গী হয়েছিলেন পর্দার শাহরুখ।
যে শাহরুখের স্বপ্নে বিভোর হয়ে বড় হওয়া, সেই কিং খানের হাত ধরেই বলিউডে অভিষেক হয় দীপিকার।
বয়সের ব্যবধান প্রায় দুই দশকের বেশি হওয়া সত্ত্বেও, কো-এক্টর হিসেবে শাহরুখকে পাওয়াই যথেষ্ট ছিলো দীপিকার কাছে। তাই নিজ সিদ্ধান্তে প্রথম হিন্দি ছবি বিনা পারিশ্রমিকেই করে ফেলেন তিনি।
এই জুটির প্রথম সিনেমা ‘ওম শান্তি ওম’। ভারতীয় সিনেমার সোনালি যুগ ও বর্তমান বাণিজ্যিক ধারার ছবির একটি মেলবন্ধন দেখানো হয়েছে এর মাধ্যমে।
রূপালি জগতের আবেদনময়ী অভিনেত্রী শান্তিপ্রিয়ার করুণ মৃত্যু ও চলচ্চিত্র দুনিয়ার কিছু কালো অধ্যায়, সিনেমায় সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নির্মাতা ফারাহ খান।
‘ওম শান্তি ওম’-এর ব্যতিক্রমধর্মী ও মর্মস্পর্শী গল্প মন ছুঁয়েছিল দর্শকের। পাশাপাশি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিলো এর গানগুলোও। বিশেষ করে ‘ধুম তা না’ গানে দীপিকা পাড়ুকোনের অসাধারণ নাচ মুগ্ধ করেছিল দর্শককে।
এতে দীপিকার ডাবল রোল ছিলো। সত্তর দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শান্তিপ্রিয়া চরিত্রে, নবাগতা দীপিকার অভিনয় মুগ্ধ করেছিল দর্শককে।
সিনেমায় দীপিকার বিপরীতে ছিলেন শাহরুখ। ওম প্রকাশ চরিত্রে তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী অভিনয়ও হয়েছিল প্রশংসিত।
এ সিনেমার মাধ্যমে রাতারাতি তারকা বনে যান, বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। 'ওম শান্তি ওম' এর মাধ্যমে দীপিকা -শাহরুখ জুটি হয়ে উঠে দর্শকদের বাড়তি প্রত্যাশা।
‘ওম শান্তি ওম’এর পর চেন্নাই এক্সপ্রেস ও হ্যাপি নিউ ইয়ারসহ, বেশ কিছু সিনেমাতে এই তারকা জুটিকে দেখা গেছে।
শাহরুখ-দীপিকা অভিনীত চেন্নাই এক্সপ্রেস ছবির ‘লুঙ্গি ডান্স’, আট থেকে আশির বয়সী সকলেরই পছন্দের তালিকায় ছিলো।
রোহিত শেট্টি পরিচালিত এ সিনেমায় অধিকাংশ সময়, সবুজে ঘেরা ট্রেনের জার্নি, ভীষণভাবে হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল দর্শকের।
২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটির গল্প ও গান দর্শককে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে, পার্ট টু-এর জন্য অনুরোধ করেছেন অনেক দর্শক।
২০১৪ সালে শাহরুখ দীপিকা অভিনীত হ্যাপি নিউ ইয়ার মুক্তি পায়। ফারাহ খান পরিচালিত এ সিনেমা মুক্তির দিনে, মোট ৪৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।
এর পূর্বে আর কোন বলিউড সিনেমা মুক্তির দিন ৪০ কোটি টাকার গণ্ডি ছুঁতে পারেনি। দুই দিনে ছবিটির সংগ্রহে ছিলো ৮০ কোটি টাকা।
দীর্ঘ সময় পর আবারও যশ রাজ ফিল্মস-এর নতুন সিনেমা, ‘পাঠানের মাধ্যমে এক হয়েছেন দীপিকা-শাহরুখ জুটি।
গত বছরের ১২ই ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছিল প্রথম গান ‘বেশরম রং’। পুরো গানে দীপিকা পাড়ুকোন ও শাহরুখ খানের জুটি আগুন ধরিয়েছে পর্দায়।
‘বেশরম রং’ মুক্তির পর থেকেই ছবিটিকে ঘিরে বিতর্ক ছিল তুঙ্গে। এমনকি পাঠান সিনেমাকে বয়কট করারও ডাক দেওয়া হয়েছে দেশের নানা প্রান্তে।
কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে, ২৫ জানুয়ারি বহুল প্রতীক্ষিত ‘পাঠান’ মুক্তি পেয়েছে হিন্দি, তামিল ও তেলেগু ভাষায়। সিনেমায় শাহরুখ খান ও দীপিকা পাড়ুকোন গোয়েন্দার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
মুক্তির পর থেকেই একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছে এটি। মাত্র ৪ দিনে বিশ্বব্যাপী ৪০০ কোটি রুপি অতিক্রম করেছে পাঠানের আয়।
অ্যাকশন থ্রিলার ঘরানার এই সিনেমার জন্য, শাহরুখ খান পারিশ্রমিক নিয়েছেন ১০০ কোটি রুপি, দীপিকা পাড়ুকোন নিয়েছেন ১৫ কোটি রুপি।
এছাড়াও সিনেমা পরিচালনার জন্য সিদ্ধার্থ আনন্দ পারিশ্রমিক নিয়েছেন ছয় কোটি রুপি। আর প্রধান খলনায়কের ভূমিকায় জন আব্রাহামের পারিশ্রমিক ২০ কোটি রুপি।
সিনেমাতে অতিথি চরিত্রে সালমান খান উপস্থিত থাকলেও, এর জন্য কোন পারিশ্রমিক নেননি বলিউড ভাইজান।
শাহরুখ-দীপিকা জুটি নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দীপিকা বলেন, এর আগে বেশ কয়েকটি সিনেমায় জুটি বেঁধে কাজ করেছেন তারা।
শাহরুখ খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করতে পারাটা তার জন্য‘সৌভাগ্যের বলে মনে করেন তিনি’। দর্শকরা যে তাদের একসঙ্গে দেখতে চান, সেটি সিনেমাগুলোর সফলতা দেখলেই বোঝা যায়।