বাংলাদেশের বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের চাপে মূল্য বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তেলের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন অভিযোগ করেন, হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি ভোজ্যতেল নিয়ে কারসাজি করছে। সরকার বারবার ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো মেনে নিয়েও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ। সিন্ডিকেট তেলের সরবরাহ ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে সাধারণ ভোক্তাদের কষ্ট দিচ্ছে। বাজারে তদারকি সংস্থার যথাযথ ভূমিকা না থাকায় এই সমস্যা আরও বাড়ছে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ব্যবসায়ীরা সংকট তৈরি করেছে। নভেম্বরের শুরু থেকেই এই অস্থিরতা দেখা যায়। মিল থেকে ডিলারদের কাছে তেলের সরবরাহ কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও করা হয়। ফলে খোলা তেলের দামও বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার আমদানির ওপর শুল্ক দুই দফায় কমিয়ে মাত্র ৫ শতাংশে নিয়ে আসে। ডিসেম্বরের ৯ তারিখে লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করেও বাজারে সংকট কাটেনি।
সরকার ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে নতুন বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি ও অগ্রিম আয়কর শতভাগ মওকুফ করেছে। এছাড়া ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবুও বোতলজাত সয়াবিন তেল এখনও বাজার থেকে প্রায় উধাও।
রাজধানীর জিনজিরা, নয়াবাজার ও কাওরান বাজারের পরিস্থিতি আরও খারাপ। দোকানগুলোতে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত তেল মিলছে না। পাঁচ লিটারের তেলের সরবরাহও খুবই কম। বিক্রেতারা বলছেন, পাঁচ লিটারের তেল ৮৩৭ টাকা কিনে ৮৫২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তিন লিটারের বোতল ৫২৫ টাকায় বিক্রি হলেও এর আগে দাম ছিল কিছুটা কম। খোলা সয়াবিন লিটারে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ক্রেতাদের জন্য অসহনীয়।
ভোক্তাদের দাবি, সরকার যদি সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়, তাহলে এই সংকট কেটে যাবে। তবে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো তদারকি দেখা যাচ্ছে না। বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।