ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম শনিবার যশোরের টাউন হল ময়দানে এক জনসভায় বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সরকারের বিকল্প নেই। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বজুড়ে ১৪৭টি দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু থাকলেও ৯২টি দেশে জাতীয় সরকার ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। এই ব্যবস্থায় প্রতিটি ভোটারের ভোটের যথাযথ মূল্যায়ন হয় এবং সংসদে সব দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। দলভিত্তিক ভোটে কোনো দল মাত্র ২-১ শতাংশ ভোট পেলেও সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে, ফলে এককভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার, ফ্যাসিস্ট আচরণ বা অর্থ পাচারের সুযোগ আর থাকবে না।
মুফতি রেজাউল করিম বলেন, এই জাতীয় সরকার ব্যবস্থা গঠিত হলে দেশে প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাবে। এসময় তিনি রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে বলেন, “রাষ্ট্রের প্রধান যখন মিথ্যাচার করেন, তখন তার আর ওই পদে থাকার যোগ্যতা থাকে না।” রাষ্ট্রপতি ৫ আগস্টে দেওয়া ভাষণে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে করা তার মন্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এমন অবস্থায় তিনি জনগণের আস্থা হারিয়েছেন বলে মুফতি রেজাউল মন্তব্য করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যশোর জেলা শাখার সভাপতি মিয়া মুহাম্মদ আব্দুল হালিম। অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা, সিনিয়র সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মফিজুল আলম খোকা, ডা. আবু নসর, সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল হালিম, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সরদার, জেলা সদস্য মাওলানা গোলাম আজম খান, সংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ আব্দুর রশিদ, প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক ও ইসলামী যুব আন্দোলনের জেলা সভাপতি কামরুজ্জামান, ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক গাজী সহিদুল ইসলাম, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ফজলুল করিম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক বিল্লাহ ও বাবলুজ্জামান প্রমুখ।
মুফতি রেজাউল করিম আরও বলেন, কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে হলে বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা হলে রাজনৈতিক সহিংসতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, “জাতীয় সরকার হলে কেউ আর ফ্যাসিস্ট হতে পারবে না। জনগণের স্বার্থ বিরোধী কোনো কার্যক্রম সহজে করতে পারবে না।”
তিনি এও বলেন, বর্তমান সময়ে শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে এমন একটি সরকার প্রয়োজন, যা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে। মুফতি রেজাউল করিম তার বক্তব্যে বলেন, ইসলামী আন্দোলন দেশের মানুষের স্বার্থে সবসময় রাজপথে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কল্যাণ রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করতে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত নেতারা বক্তব্যে বলেন, দেশে বিরাজমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হলে সবার জন্য সমান সুযোগ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। মুফতি রেজাউল করিমের এই বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলন দেশে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছে।