ক্যাম্পাস

অবন্তিকার আত্মহত্যা; জামিন পেয়েও শাস্তিতে জবি শিক্ষক দ্বীন ইসলাম

স্টাফ রিপোর্টারঃ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

শুক্রবার, ৭ জুন, ২০২৪
অবন্তিকার আত্মহত্যা;  জামিন পেয়েও শাস্তিতে জবি শিক্ষক দ্বীন ইসলাম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়   প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় করা মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম জামিন পেলেও শাস্তি ভোগ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারের কারণে বেসিক বেতনের ৫০ শতাংশ পাচ্ছেন তিনি। এঅবস্থায় দুই সন্তানসহ পরিবার নিয়ে অর্থিক টানাপোড়েনে দিন কাটছে তার। এদিকে অতিরিক্ত মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে ঘাড়ের "ডিস-ডিসপ্লেস" হয়েছে তার। চলছে ব্যায়বহুল চিকিৎসা। এদিকে অবন্তিকার আত্মহত্যায় মামলা করেন তারা মা। প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়নি পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে দ্রুত তদন্ত রিপোর্টের দাবি জানিয়েছেন অবন্তিকার মা ও ভুক্তভোগী শিক্ষক দ্বীন ইসলাম। 
জানা যায়, অবন্তিকা গত ১৫ মার্চ রাতে কুমিল্লার বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। এর পরেই মামলা করেন তারা মা তহমিনা। এই মামলায় গত ১৬ মার্চ গ্রেফতার হয় দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী। ১ মাস ২১ দিন জেল খাটার পর জামিন পায় শিক্ষক দ্বীন ইসলাম। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সহ পুলিশ প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে পারছেন না তিনি। 
এর আগে ২০২২ সালের ৭ আগস্ট তৎকালীন উপাচার্য ইমদাদুল হকের নিকট অবন্তিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয় তার সহপাঠীরা। পরদিন ৮ আগস্ট তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামালের নিকট বিষয়টি সুরহার জন্য দ্বায়িত্ব দেন উপাচার্য ইমদাদুল হক। এরপর প্রক্টর মোস্তফা কামাল মেয়ের বাবা-মাকে কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়।
১১ আগস্ট এই বিষটিকে নিষ্পত্তি করার জন্য সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও গৌতম কুমার সাহাকে দায়িত্ব দেয় প্রক্টর। এঘটনায় আত্নহত্যাকারী শিক্ষার্থী অবন্তিকা নিজের দোষ স্বীকার করে ১৪ আগস্ট। পরে মেয়ের দোষ স্বীকার করে তার বাবা-মা মুচলেকা দেয় ২৮ আগস্ট। এখানেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন প্রক্টর ড.মোস্তফা কামালের নিকট হয়রানি ও উত্তক্তকরার অভিযোগ করেন অবন্তিকা। কিন্তু এঘটনার কোন ব্যবস্থা নেয়নি মোস্তফা কামাল। দায়িত্ব দেয়নি অন্য সহকারী প্রক্টরদেরো।
এবিষয়ে মোস্তফা কামাল গনমাধ্যমকে জানান, অবন্তিকা একটা অভিযোগ দিয়েছিল নভেম্বর মাসে। পরে তাকে ডাকানো হলে সে আর যোগাযোগ করেনি। তাই এ বিষয়ে পরবর্তী সময় আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগী দেখা না করলে কি অভিযোগ আমলে নেওয়া হয় না? এমন প্রশ্নে অধ্যাপক মোস্তফা কামাল জানান, আমলে নেওয়া হয়। কিন্তু এর আগে এ অভিযোগের একবার মীমাংসা হয়েছিল বলে সরাসরি তার বক্তব্য জানতে চেয়েছিলাম। সে আর যোগাযোগ করেনি।"
এঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম বলেন, আমি যদি দোষী হই আমার শাস্তি হোক কিন্তু বিনাদোষে আমার জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। অবন্তিকার বিরুদ্ধে যে তদন্ত আমার উপর ছিলো সেটা আগেই নিষ্পত্তি হয়ে যায় আগেই। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর অবন্তিকা তার সহপাঠী আম্মানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দেয় সেটার কোন দ্বায়িত্ব আমার উপর ছিলো না। প্রক্টর  মোস্তফা কামাল এই অভিযোগ আমলে না নিয়ে চার মাস ফেলে রাখে। এখানে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। 
দ্বীন ইসলাম বলেন, বিচার করেনি মোস্তফা কামাল। কিন্তু ভুল বুঝাবুঝির কারণে আমার নাম এসেছে। আমি নির্দোষ। কারণ অবন্তিকা অভিযোগ দেয় প্রক্টর বরাবর। প্রক্টর এটা আমলে নেয়নি। ভুক্তভোগী শিক্ষক দ্বীন ইসলাম আরো বলেন, আমি এখন মাঝপথে ঝুলে আছি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সাপেক্ষে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আবেদন করতে পারতাম। কিন্তু তদন্ত কমিটির রিপোর্ট না আসায় কিছু করতেও পারছিনা। আমি চাই সঠিক তথ্যটাই উঠে আসুক। 
এদিকে সুত্র জানায়, তদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন করে দ্বীন ইসলামকে ফাঁসানোর জন্য শিক্ষকদের একটি পক্ষ জোর তদবির করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম গোপন রাখার শর্তে সূত্র বলেন, দ্বীন ইসলামকে ফাঁসানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন শিক্ষক বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে যুক্ত আছে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতা। 
দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার দাবি জানান অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। তিনি বলেন, এতদিন হয়ে গেল কোন তদন্ত হলো না। দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট দিক। দোষীরা শাস্তি পাক। 
তদন্ত রিপোর্টের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.জাকির হোসেন জানান, আমাদের তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। আশাকরি খুব দ্রুতই প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো। 
তবে কোতোয়ালি মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা শিবেন বিশ্বাস বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন " তদন্ত প্রতিবেদন এখনও সম্পন্ন হয়নি। সুরতহালের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি এখনো। প্রতিবেদন আসতে দেরি হবে। কার্যক্রম চলছে।