হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই স্নাতক নিকোল মাও এবং ইওয়েই ঝু বাংলাদেশের বৈদ্যুতিক রিকশার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন। করোনা মহামারির সময় বাংলাদেশে আটকে পড়া এই দুই তরুণী স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থার চাহিদা দেখে ব্যাটারি সোয়াপিং স্টেশন নিয়ে কাজ শুরু করেন। তাদের স্টার্টআপ, "টাইগার নিউ এনার্জি," ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম দ্রুত প্রসারমান উদ্যোগে পরিণত হয়েছে।
চীনে ব্যাটারি ব্যবসার পারিবারিক অভিজ্ঞতা থেকে প্রভাবিত হয়ে নিকোল মাও এবং ইওয়েই ঝু বাংলাদেশের বৈদ্যুতিক রিকশার জন্য একটি ব্যাটারি সোয়াপিং নেটওয়ার্ক চালু করেন। এটি রিকশাচালকদের সময় ও অর্থ সাশ্রয় করে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। চালকদের একটি নির্দিষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাটারি পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়, যা তাদের আয়ের সুযোগ বাড়ায়।
প্রথম ১০০টি ব্যাটারি সোয়াপিং স্টেশন চট্টগ্রামে স্থাপন করা হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ১,০০০-এ উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে।
বাংলাদেশে তিন চাকার বৈদ্যুতিক রিকশা জনপ্রিয় হলেও, প্রচলিত সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি চার্জ করতে দীর্ঘ সময় লাগে এবং মেয়াদ শেষে তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়। মাও এবং ঝু এ সমস্যার সমাধান হিসেবে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ব্যবহার শুরু করেন। এগুলো দীর্ঘস্থায়ী এবং পরিবেশবান্ধব।
তবে চালকদের অনেকেই নতুন ব্যাটারি কেনার জন্য একসঙ্গে ৪০০ মার্কিন ডলার ব্যয় করতে পারতেন না। এ কারণে তারা ব্যাটারি সোয়াপিং মডেল চালু করেন। এতে চালকেরা যখন ব্যাটারির চার্জ কমে যায়, তখন নিকটবর্তী স্টেশনে গিয়ে দ্রুত নতুন ব্যাটারি বদল করতে পারেন।
এই উদ্যোগের মূল শক্তি লিথিয়াম ব্যাটারির কার্যকারিতা এবং দ্রুত সোয়াপিং সুবিধা। স্টেশনগুলোতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা এবং ভয়েস নির্দেশনা প্রক্রিয়াটি সহজ করে তোলে। এর ফলে রিকশাচালকরা কম সময়ে বেশি ট্রিপ দিতে পারছেন, যা তাদের আয় বাড়িয়ে দিচ্ছে।
টাইগার নিউ এনার্জি স্টার্টআপটি ফিলিপাইনের এডিবি ভেঞ্চারস এবং সিঙ্গাপুরের ওয়েভমেকার পার্টনার্সের কাছ থেকে বিনিয়োগ পায়। এ অর্থে তারা লিথিয়াম ব্যাটারির কারখানা স্থাপন করেন।
টাইগার নিউ এনার্জির প্রধান নির্বাহী নিকোল মাও বলেন, “বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক পরিবহন ব্যবস্থার চাহিদা অসীম। শহরে কাজের খোঁজে গ্রাম থেকে মানুষ আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে।”
এই উদ্যোগ শুধু রিকশাচালকদের জীবনমান উন্নত করছে না, বরং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিবহন খাতের ভবিষ্যৎ বদলে দিচ্ছে।