বাংলাদেশের উন্নয়ন

কক্সবাজারে সাগরের বুকে রানওয়ে! চলতি বছরেই উঠানামা করবে বিমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০২৩
কক্সবাজারে সাগরের বুকে রানওয়ে! চলতি বছরেই উঠানামা করবে বিমান
উত্তাল সাগরের বুকে দৃশ্যমান হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় রানওয়ে। অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক দিনের। এরপর সমুদ্র ছুঁয়েই ওঠানামা করবে বিমান। অবতরণের সময় যাত্রীদের মনে হবে, যেন সাগরেই নামতে যাচ্ছেন তারা। এমন ব্যতিক্রমী অনুভূতি দেয়ার পাশাপাশি, কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বের দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর তালিকায় স্থান পেতে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ প্রায় শেষ।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চীনা কোম্পানি জানিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তারা বাকি অংশের কাজও সম্পন্ন করতে চাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে, ডিসেম্বরের মধ্যেই সমুদ্রের বুকে থাকা রানওয়েতে চলাচল করতে পারবে উড়োজাহাজ। 

সকল কাজ শেষ হলে শুধু সূর্যের আলো থাকা অবস্থায়, আকাশপথে কক্সবাজার যাওয়ার দিন শেষ হবে। তখন রাতেও যাত্রী নিয়ে উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়ন করবে, দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার বিমানবন্দরে। এখানে বর্ণিল আলোয় সমুদ্র ছুঁয়ে ওঠানামা করবে বড় বড় উড়োজাহাজ। এমনকি পর্যটন নগরীর চোখ ধাধানো এয়ারপোর্টের রানওয়েতে, নতুন প্রজন্মের বোয়িং 777-300 ER, B-747, এয়ারবাসসহ, অন্যান্য বড় বিমানও ল্যান্ড করতে পারবে।

এতদিন বিমানবন্দরটির রানওয়ের দৈর্ঘ্য কম ও অন্যান্য অবকাঠামো অনুন্নত থাকায়, সব ধরনের প্লেন চলাচল করতে পারত না। এমনকি এখানে কোন আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও পরিচালিত হয় না। তাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটকদেরকে, ঢাকা হয়ে কক্সবাজার যেতে হয়। আর এর ফলে নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদেরকে।

এসব ভোগান্তি দূর করার জন্য রানওয়ে এবং টার্মিনাল ভবন সম্প্রসারণের মাধ্যমে, কক্সবাজার এয়ারপোর্টকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে, ২০১২ সালে একটি মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জায়গা না থাকায় রানওয়ে সম্প্রসারণ নিয়ে জটিলতা দেয়া দেয়। শেষ পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন করার পরিকল্পনা থেকে, সমুদ্র সৈকতের ভেতরেই রানওয়ে করার সিদ্ধান্ত হয়। 

নানা রকম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে, ২০২১ সালে শুরু হয় বিশাল কর্মযজ্ঞ। মহেশখালী চ্যানেলের দিকে ল্যান্ড রেক্লেমেশন প্রক্রিয়ায়, সম্প্রসারিত করা হয় রানওয়ে। যার জন্য প্রথমে সমুদ্রের তলদেশে ব্লক নির্মাণ করা হয়। বিশাল ঢেউ থেকে সুরক্ষা দিতে, কংক্রিট ফেলে গড়ে তোলা হয় বাঁধ। তারপর সেটির ভেতরে বানানো হচ্ছে স্থাপনা। দেশে এই প্রক্রিয়ায় এবারই প্রথম কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।

বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ২.৭৪ কিলোমিটার। সম্প্রসারণ কার্যক্রম শেষে আধা কিলোমিটার বেড়ে, নতুন দৈর্ঘ্য হবে ৩.২ কিলোমিটার। যা কিনা হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকেও ২০০ ফুট বেশি। দৃষ্টিনন্দন এ রানওয়েটি হবে উপমহাদেশের এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে, সমুদ্র শাসন করে তৈরি করা প্রথম রানওয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। 

সাগরের পানি নিষ্কাশন করে জমি ভরাটের মতো চ্যালেঞ্জ ও করোনার দুর্যোগ পেরিয়ে, প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করতে পারবেন তারা। সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে আছে। এখন ভবনের ভেতর ইমিগ্রেশন, বোর্ডিং পাস, লাউঞ্জের কাজ করা হচ্ছে। 

সবমিলিয়ে কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯০ শতাংশের বেশি। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরেই মধ্যেই পূর্ণ রুপে অপারেশন শুরু করবে কক্সবাজার বিমানবন্দর। এরপর এটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করলে, বিদেশি পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পাবে। পর্যটন খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি, বাড়বে রাজস্ব আয়। আর্থিকভাবে লাভবান হবে সরকার। 





এস/এস