সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে নির্মিত হচ্ছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল।
যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই এই টার্মিনালের সাথে যুক্ত হচ্ছে মেট্টোরেল-১ এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ফলে যানজট এড়িয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌছাতে পারবেন যাত্রীরা।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে দু’টি টার্মিনাল রয়েছে। বছরে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখের মতো যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা আছে এটির।
বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী চাপ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে দেশের প্রধান এই বিমানবন্দর। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চাপ আরো বেড়ে যাবে।
অতিরিক্ত চাপের কারনে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রকম সমস্যা। এসব সমস্যা থেকে রেহাই দিতেই তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে।
ভারী যন্ত্র দিয়ে চলছে টার্মিনালের নির্মাণ কাজ। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে পুরো বেসমেন্ট নির্মাণ। ৩ হাজার ৪৯টি পিলারের ওপর ৩ তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজও শেষ হয়েছে। যার ফলে পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে টার্মিনালটি।
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই থার্ড টার্মিনালটি হস্তান্তর করতে চায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তাই জোরেসোরেই চলছে দেশের প্রধান বিমানবন্দর নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ। ব্যবহার করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।
বছরে দুই কোটি যাত্রীসেবা দেয়ার লক্ষে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে টার্মিনালের চিত্র বদলে দিতে চায় কর্তৃপক্ষ।
এই টার্মিনালের সাথে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত হচ্ছে। আর তাই বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের একটি লুপ নেমে গেছে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং থার্ড টার্মিনালের সংযোগ দৃশ্যমান হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টার্মিনালে নামার জন্য সুড়ঙ্গ পথ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।
আর এটি ব্যবহার করে দেশি- বিদেশি যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে দ্রুত সময়ে বের হতে পারবেন। আবার যানজট এড়িয়ে বিমান বন্দরে পৌছাতে পারবেন খুব দ্রুত সময়ে।
সংশ্লিষ্টদের মতে.পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিমানবন্দর থেকে কুতবিখালী পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে সরাসরি যাওয়া যাবে নির্মিতব্য নতুন টার্মিনালে।
সেজন্যই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টার্মিনালে নামার জন্য রাখা হচ্ছে আলাদা ব্যবস্থা। ঠিক একই পথ ব্যবহার করে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েও যাওয়া যাবে।
দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরটির তৃতীয় টার্মিনালের জন্য আরও চমক হলো এর সাথে যুক্ত হচ্ছে মেট্রোরেল-১। কাওলা স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে শুধু তৃতীয় টার্মিনালে যাওয়ার জন্যই।
টার্মিনালের প্রথম গেট এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে টানেল। এই টানেল গিয়ে মিলবে বিমানবন্দরের অদূরে অবস্থিত মেট্রোরেলের স্টেশনে।
নির্মাণধীন তৃতীয় টার্মিনালে থাকছে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা। টার্মিনালে ঢুকেই যাতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে না হয়, সে জন্য থাকছে ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার। চেক ইন পর্ব শেষ করা হলেই ইমিগ্রেশন।
তৃতীয় টার্মিনালে নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। যেটি সংযুক্ত থাকবে উড়োজাহাজের সঙ্গে। বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার তৈরি করা হচ্ছে ৬৪টি। আর আগমনী ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৪টি। লাগেজ বা ব্যাগ টানার জন্য নির্মিত হচ্ছে ১৬টি কনভেয়ার বেল্ট।
তিনতলা বিশিষ্ঠ এই টার্মিনাল ভবনটি স্থাপত্যরীতিতেও অনন্য। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে এটি নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পটিতে সবমিলিয়ে ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
এটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বাকি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপানের সংস্থা জাইকা।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী টার্মিনালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। দেশের প্রধান এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১ লাখ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে দু’টি টার্মিনাল নির্মিত।
নতুন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের টার্মিনালটি বর্তমান দুটি টার্মিনালের দ্বিগুণেরও বেশি। টার্মিনালটি লন্ডনের হিথ্রো বা থাইল্যান্ডের বিমানবন্দরগুলোর মতোই দেখতে হবে।
এর মাধ্যমে যাত্রীদের দুর্ভোগ অনেকাংশেই কমে আসবে। বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। দেশে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। একই সাথে বিদেশিরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী হবে।
কার্গো হ্যান্ডেলিং সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় রফতানি ও জিডিপি বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি এ বিমানবন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।