ট্যুরিজম

যে কারণে আইসল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২
যে কারণে আইসল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশ

শান্তির দেশ আইসল্যান্ড৷ যেখানে প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে জনপ্রিয় তারকারা নিরাপত্তার জন্য কোনো বডিগার্ড ব্যবহার করেন না৷ 

দেশটিতে অপরাধের হার একেবারেই কম হওয়ায় বডিগার্ডের কথা কেউ চিন্তাও করেন না। বরং বডিগার্ড ব্যবহারকে তারা বাড়তি ঝামেলা মনে করেন।

২০২২ সালেও বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশের খেতাব পেয়েছে আইসল্যান্ড। দ্য ইনস্টিটিউট অব ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পিস বা আই ই পি প্রতি বছর গ্লোবাল পিস ইনডেক্স প্রকাশ করে থাকে।

২০২২ সালে এই তালিকার এক নম্বর স্থান দখল করেছে আইসল্যান্ড। দেশটি টানা এক দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশের খেতাব জিতে আসছে।

আই ই পি বেশ কিছু সূচকের উপর ভিত্তি করে প্রতি বছর গ্লোবাল পিস ইনডেক্স প্রকাশ করে থাকে। 

এর মধ্যে রয়েছে সহিংসতায় মৃত্যু সংখ্যা, সন্ত্রাসবাদের প্রভাব, সামাজিক নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ সংঘাত, ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। এসব সূচকে আইসল্যান্ডের অবস্থান সবচেয়ে ভালো৷ 

বিশ্বের সবচেয়ে কম অপরাধ প্রবণ রাষ্ট্র গুলোর মধ্যে একটি এটি। তাদের ক্রাইম রেট ২৩.৭৫, যা খুবই কম হিসেবে ধরা হয়। মূলত শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের হার বেশি হওয়ায় অপরাধের মাত্রা এত কম। 

শহর ও গ্রামে চুরি ও ডাকাতির মতো ছোট ছোট অপরাধের সংখ্যাও একেবারে নগন্য। আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকিয়াভিক নিরাপত্তার দিক দিয়ে বিশ্বের ৪৫৩টি শহরের মধ্যে ৩৩তম স্থানে রয়েছে৷

শান্তিপ্রিয় দেশ হওয়ায় তাদের কোনো সেনাবাহিনী নেই৷ এছাড়া দেশটির পুলিশ বাহিনী টহল দেওয়ার সময় কোনো প্রকার অস্ত্র বহন করেন না।

তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ভাইকিং স্কোয়াড নামে একটি সুদক্ষ এলিট ফোর্স রয়েছে। 

সামাজিক নিরাপত্তার দিক দিয়েও ভালো অবস্থানে রয়েছে আইসল্যান্ড৷ বিশেষ করে জেন্ডার ইকুয়ালিটিতে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে তারা। 

দেশটিতে নারী অধিকার বিশেষভাবে সংরক্ষিত। 
এছাড়া সকল প্রকার বৈষম্য আইনত নিষিদ্ধ। প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ম পালন ও জীবনযাপন করতে পারেন। 

বেটার লাইফ ইনডেক্সের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচকে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে আইসল্যান্ড৷ 
বিশেষ করে সামাজিক সম্পর্ক ও কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে দেশটি৷ 

পরিবেশ, আয় ও সন্তুষ্টির দিক দিয়ে শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে অবস্থান করছে আইসল্যান্ড। এখানকার ৭৬ ভাগ জনগণ তাদের জীবনযাপন নিয়ে সন্তুষ্ট। 

এই সন্তুষ্টির প্রতিফলন ঘটেছে বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায়। সুখী দেশগুলোর মধ্যে আইসল্যান্ডের অবস্থান চতুর্থ। 

শিশু নিরাপত্তায়ও সুখ্যাতি রয়েছে তাদের৷ একে শিশুদের জন্য স্বর্গ বলা হয়৷ আইসল্যান্ডের শিশুরা অন্যান্য দেশের শিশুদের চেয়ে ভালো ঘুমিয়ে থাকে। 

নির্মল বাতাস শিশুদের বেড়ে উঠার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বলে দেশটির সাধারণ মানুষের বিশ্বাস। এছাড়া অপরাধ প্রবণতা কম থাকায় বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য বাড়তি দুশ্চিন্তা করতে হয় না। 

সন্তানের লালন পালনে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় বলে আইসল্যান্ডার্সরা নিজ দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও পাড়ি জমাতে চান না। এমনকি যুবকরা বাইরের দেশে পড়াশোনা করতেও যেতে চান না।

কারণ আইসল্যান্ডে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তবে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য যারা বিদেশ যান, তাদের অধিকাংশই পড়াশোনা শেষ করে নিজ দেশে ফেরেন। 

আইসল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এখানে হিংস্র জীবজন্তু নেই বললেই চলে৷ 

বাঘ, সিংহ তো দূরের কথা, দেশটিতে বিষাক্ত কোনো সাপও নেই। কম অপরাধ প্রবণ হওয়ায় এবং হিংস্র জীবজন্তু না থাকায় সব জায়গায়  ভয়ডরহীনভাবে ভ্রমণ করা যায়। 

এছাড়া দেশটিতে সচরাচর প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেখাও মেলে না। এ কারণে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ বিদেশি পর্যটকের সমাগম হয়ে থাকে।

নিরাপদের পাশাপাশি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের দেশ আইসল্যান্ড। এখানে এসে একসাথে নর্দান লাইটস, গ্লেসিয়ার এবং আগ্নেয়গিরি দেখার সুযোগ রয়েছে।

পাশাপাশি কালো বালির সমুদ্র সৈকত বা ব্ল্যাক বিচ এবং উষ্ণ জলের হট স্প্রিংয়ে আনন্দঘন সময় কাটানোরও সুযোগ রয়েছে। 

অধিকাংশ আইসল্যান্ডার্স ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন এবং তারা পর্যটকদের প্রতি বেশ আন্তরিক।