ফুটবল

স্পোর্টস প্রেস এসোসিয়েশনের 'সম্মানজনক' সদস্যপদ থেকে কাজী সালাউদ্দিনকে বহিস্কার!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বুধবার, ৩ মে, ২০২৩
স্পোর্টস প্রেস এসোসিয়েশনের 'সম্মানজনক' সদস্যপদ থেকে কাজী সালাউদ্দিনকে বহিস্কার!
বাংলাদেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে ও বিশ্ব দরবারে উঁচু করে তুলে ধরতে যারা দিন রাত কাজ করেন, মাঠে ময়দানে যে কোনো পরিস্থিতিতে যারা সংবাদ সংগ্রহ করে প্রচার করেন, তাঁদেরকে নিয়ে এমনকি তাঁদের বাবা-মাকে নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন। 
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন ও সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ বাফুফের নির্বাহী কমিটির দীর্ঘ সভার পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় মাইক্রোফোনের সামনে বলেন, ‘জার্নালিস্ট এখানে ঢুকতে গেলে তাদের বাপের ছবি দিতে হবে। কন্ডিশন হলো, বাপের একটা ফটো পাঠাবে জুতা পরা। ঠিক আছে? এটা ম্যান্ডেটরি। আমার তো এখানে বাপের জুতা পরা ছবি থাকতে হবে।
ক্রীড়া সাংবাদিক ও তাঁদের বাবা-মাকে নিয়ে এমন আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জের ধরে, বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় ও পুরনো সংগঠনটি বলেছে, ‘সাংবাদিকদের ওপর ওই দুইজনের কতটা বিদ্বেষ, সেটা প্রকাশ পেয়েছে তাদের কথাবর্তায়। তারা শুধু সাংবাদিকদের নয়, তাদের পরিবার এমনকি সাংবাদিকদের মা-বাবাকে পর্যন্ত কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। এটা পুরো সাংবাদিক সমাজকে ভীষণভাবে আহত করেছে।'
বিবৃতিতে আরো বলা হলেছে, ‘একজন লিজেন্ডারি খেলোয়াড় হিসাবে বাফুফে সভাপতি পদে বসার পর কাজী মো. সালাউদ্দিনকে ২০১২ সালে বিএসপিএ সম্মানসূচক অনারারি সদস্য পদ দিয়ে আপন করে নিয়েছিল।’
‘তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার আচরণ, বক্তব্য সবকিছুই এই ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সাংবাদিক সংগঠনের মতাদর্শের পরিপন্থী। তার কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ক্রীড়া সাংবাদিকদের আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছে। তাই বিএসপিএর কার্যনির্বাহী কমিটি জরুরি সভা করে কাজী মো. সালাউদ্দিনকে অনারারি সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

সেই সাথে এমন কান্ড জ্ঞানহীন আচরণে কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগ চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা রিপোর্টার্স উইনিটি।

বিএফউইজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদ উল আলম ও মহাসচিব দীপন আজাদের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে অবিলম্বে কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগের আহ্বান করা হয়। অন্যথায় সারাদেশের ফুটবল সংগঠকদের তাঁকে অপসারণে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হবে। 

ওই বিবৃতিতে কাজী সালাউদ্দিনের এহেন আচরণে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এছাড়াও সভাপতি থাকা অবস্থায় ফুটবলের মান ও র‍্যাংকিং দিন দিন নিচের দিকে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। 

বিএফইউজে মনে করে দেশে ও দেশের বাইরে ফুটবলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের পাশাপাশি সাংবাদিকদের এমন কটাক্ষ করার পর কাজী সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। 

ঢাকা রিপোর্টার্স উইনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল এক বিবৃতিতে কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করে বলেন, বাফুফের সভাপতির মতো শীর্ষ পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। 

শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, তাদের পরিবারকে জড়িয়ে এই বক্তব্য দেয়ার পর বাফুফে সভাপতির মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষ আজ সন্দিহান হয়ে পড়েছে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ রয়েছে সকল পেশার মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। 

কাজী সালাউদ্দীন যে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কথা বলেছেন, সে ভাষায় সাংবাদিকরা কথা বলতে মোটেও অভ্যস্থ নন। আমরা অবিলম্বে কাজী সালাহউদ্দীনকে জাতির সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান করছি।

কাজী সালাউদ্দিন এর আগেও সাংবাদিকদের বিষয়ে নানা কু-মন্তব্য করেছেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বারবারই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে নিজের অহংকার ও ক্রোধের শিকার করেছেন। 

গত বছর  ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বিএসপিএ সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে দ্বিতীয় হওয়ার পর সেই ক্রেস্ট ও অর্থ বিএসপিএ কার্যালয়ে ফেরত দিয়েছিলেন কাজী সালাউদ্দিন।