বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা আর্জেন্টিনার মহাতারকা লিওনেল মেসির ক্লাব ইন্টার মায়ামিকে ২০২৫ সালের ক্লাব বিশ্বকাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তবে তাদের এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। অনেকের দাবি, মেসির উপস্থিতি দিয়ে ব্যবসা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ফিফা নিয়ম ভেঙেছে।
ক্লাব বিশ্বকাপে অংশ নিতে সাধারণত দেশগুলোর লিগ চ্যাম্পিয়ন দলগুলোর যোগ্যতা অর্জনের কথা। এটি প্রতিযোগিতার মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি দলগুলোর সাফল্যকে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামি লিগ চ্যাম্পিয়ন না হয়েও এই টুর্নামেন্টে জায়গা করে নিয়েছে, যা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) সাম্প্রতিক মৌসুমে ইন্টার মায়ামি প্লে-অফ থেকে বাদ পড়ে। লিগ শিরোপার দৌড়েও তারা ছিল না। তবে তারা সাপোর্টার্স শিল্ড জিতেছে, যা এমএলএস-এর নিয়মিত মৌসুমে সর্বাধিক পয়েন্ট প্রাপ্ত দলের পুরস্কার। এবারের মৌসুমে ৩৪ ম্যাচে রেকর্ড ৭৪ পয়েন্ট অর্জন করেছে মায়ামি। এই পারফরম্যান্সকেই তাদের যোগ্যতার ভিত্তি হিসেবে দেখাচ্ছে ফিফা।
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ইন্টার মায়ামিকে ক্লাব বিশ্বকাপে আমন্ত্রণ জানানোর ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, “২০২৪ সালের সাপোর্টার্স শিল্ডে দুর্দান্ত খেলায় মিয়ামি ক্লাব বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব মিয়ামি। তাই আয়োজক দেশের প্রতিনিধি হিসাবে ওদের নাম ঘোষণা করতে পেরে আমি গর্বিত।”
ফিফার এই সিদ্ধান্তের পেছনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য থাকার অভিযোগ তুলেছেন সমালোচকরা। তাদের মতে, লিওনেল মেসির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে দর্শক টানতে এবং ব্যবসা বাড়াতে চাইছে ফিফা। নিয়মিত মৌসুমে ভালো পারফরম্যান্স করার পরও লিগ শিরোপা না পাওয়া একটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো ফিফার দীর্ঘদিনের নিয়ম লঙ্ঘনের শামিল।
বিশ্ব ফুটবলের বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্লাব বিশ্বকাপের মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতার জন্য দল নির্বাচনে নিয়মের পরিবর্তন করা টুর্নামেন্টের মূল ভিত্তিকে দুর্বল করে দিতে পারে। তবে মেসির উপস্থিতি এই টুর্নামেন্টে বিশ্বব্যাপী নজর কাড়বে এবং আয়োজকদের আর্থিক লাভের সুযোগ তৈরি করবে, যা ফিফার সিদ্ধান্তের পেছনে বড় একটি কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৫ সালের ক্লাব বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুন থেকে ১৩ জুলাই। এই প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো ৩২টি দল অংশ নেবে, যা ফিফার টুর্নামেন্ট সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অংশ। মেসির মতো তারকার উপস্থিতি এই টুর্নামেন্টের আকর্ষণ অনেকগুণ বাড়িয়ে দেবে, যা আয়োজকদের কাছে একটি বড় সুবিধা।
ফিফা এখনো এই সিদ্ধান্তের পেছনের যৌক্তিকতা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে সভাপতি ইনফান্তিনোর বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, আয়োজক দেশের প্রতিনিধি হিসেবে মিয়ামি ক্লাবকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়াকে তারা বৈধতা দিতে চায়।
ইন্টার মায়ামিকে ক্লাব বিশ্বকাপে আমন্ত্রণ জানানো ফুটবলবিশ্বে একটি নজির তৈরি করবে। এটি ফিফার নিয়ম পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে, যেখানে বাণিজ্যিক বা বিশেষ প্রেক্ষাপটেও দল নির্বাচনের সুযোগ থাকবে। তবে এটি প্রতিযোগিতার ন্যায়বিচার ও মর্যাদার ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।
বিশ্বব্যাপী ফুটবল ভক্তদের জন্য ক্লাব বিশ্বকাপ একটি প্রতীক্ষিত প্রতিযোগিতা। তবে ইন্টার মায়ামির অন্তর্ভুক্তি এবং এটি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্তের প্রতি সমালোচনার একটি উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে।