খেলা

অবিশ্বাস্য জয়ে সেমিতে অস্ট্রেলিয়া, হৃদয় ভাঙলো আফগানিস্তানের

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৩
অবিশ্বাস্য জয়ে সেমিতে অস্ট্রেলিয়া, হৃদয় ভাঙলো আফগানিস্তানের
২৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৯১ রানে ৭ উইকেট হারায় অজিরা। অফগানরা যেন তখন জয়ের সুবাতাস পাচ্ছিল। কিন্তু ম্যাচের শেষটা হলো উল্টো। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অবিশ্বাস্য ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংসে আফগানিস্তানকে ৩ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে চলে গেছে অস্ট্রেলিয়া। আর হৃদয় পুড়লো আফগানদের।

ম্যাক্সওয়েলকে ক্রিজে সঙ্গ দিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে সাহায্য করেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। তারা ২০২ রানের জুটি গড়েছেন। যেখানে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের অবদান ৬৮ বলে ১২ রান। আর শতক পেরোনোর আগেই ৭ উইকেট হারিয়ে খাঁদের কিনারায় চলে যাওয়া অজিদের ইনিংস একাই টানেন ম্যাক্সওয়েল। ১২৮ বলে ২০১ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলেন ‘ম্যাক্সি’।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দেখেশুনেই করেছিলেন দুই আফগান ওপেনার ইব্রাহীম ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ। তবে জশ হ্যাজলউডের বল ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিচেল স্টার্কের হাতে ধরা পড়েন গুরবাজ। ফলে ২১ রান করেই সাজঘরে ফেরেন এই আফগান ব্যাটার।

এরপর উইকেটে আসা নতুন ব্যাটার রহমত শাহকে নিয়ে ইনিংস মেরামত করেন ইব্রাহীম। তৃতীয় উইকেটে এই দু’জনে মিলে গড়েন ৮৩ রানের জুটি। তবে রহমতকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল। রহমত লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে জস হ্যাজেলউডের হাতে ধরা পড়েন ৪৪ বলে ৩০ রান করে।

চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক শাহিদিকে নিয়ে আবারও ৫২ রানের জুটি গড়েন ইব্রাহীম। অবশ্য মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হয়ে শেষ হয় শহীদির ২৬ রানের ইনিংস। উইকেটে এসে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা আজমতউল্লাহ ওমরজাই আউট হন জাম্পার বলে অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে। তার ব্যাট থেকে আসে ২২ রান।

এরপর মোহাম্মদ নবি ১২ রান করে ফিরলেও রশিদ খানকে সঙ্গী করে দারুণ এক জুটি গড়ে ফেলেন ইব্রাহীম। ৫৮ রানের অবিচ্ছিন এই জুটি এসেছে মাত্র ২৮ বলে। ইব্রাহীমকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে ১৮ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৫ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন রশিদ। অন্যদিকে, ৩টি ছক্কা ও ৮টি চারের সাহায্যে ১২৯ রানে অপরাজিত ছিলেন ইব্রাহীম। ফলে নির্ধারীত ৫০ ওভার শেষে ৫ উইকেটে ২৯১ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় আফগানিস্তান।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট শিকার করেন জশ হ্যাজেলউড। এছাড়াও একটি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

এর জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ট্রাভিস হেডের উইকেট হারায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার করতে আসা নাভিনের গুড লেন্থের বল ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক ইকরাম আলীখিলের হাতে ধরা পড়েন এই অজি ওপেনার। শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন হেড।

তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা মিচেল মার্শ ক্রিজে এসেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন। আম্ররশের পাশাপাশি ডেভিড ওয়ার্নারও বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। তবে আজি শিবিরে আবারও আঘাত হানেন নাভিন। এই আফগান পেসারের ইন সুইং বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন মার্শ। ২টি ছক্কা ২টি চারের সাহায্যে ১১ বলে ২৪ রানে ফেরেন এই অজি অলরাউন্ডার।

এরপর বল হাতে অজি ইনিংসে ধস নামান আজমতউল্লাহ। ইনিংসের নবম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন এই ডানহাতি পেসার। ফেরান ওয়ার্নার ও জস ইংলিসকে। পাওয়ারপ্লে শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৪ উইকেট হারিয়ে ৫২ রান। এরপর মার্নাস লাবুশেনও ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গী হিসেবে টিকতে পারেননি, রানআউট হয়ে ফিরেছেন। টিকতে পারেননি মার্কাস স্টইনিস ও মিচেল স্টার্কও। ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।

এই ধ্বংসস্তূপ থেকেই অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে ইতিহাস গড়েছেন গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল। অষ্টম উইকেট জুটিতে প্যাট কামিন্সকে নিয়ে ম্যাক্সওয়েল ২০২ রানের জুটি গড়েছেন। এর মধ্যে মাত্র ১২ রান এসেছে কামিস্নের ব্যাট থেকে। বাকি সব রানই ম্যাক্সওয়েলের।

রাশিদ খানের একটি ডেলিভারিতে ছয় হাঁকিয়ে, বেশ সমস্যায় পড়তে হয় ম্যাক্সওয়েলকে। পায়ে ব্যথা আর ক্রাম্প নিয়ে, অনিশ্চিত মনে হয়, অ্যাডাম জাম্পাও একবার বাউন্ডারি লাইনে এলেন, রিটায়ার্ড হার্ট হতে হয় কি না, কিন্তু না ম্যাক্সওয়েল আবার দাঁড়ালেন।পায়ের ব্যবহার না করেই একের পর এক বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। প্রয়োজনে নিয়েছেন দুই একটি সিঙ্গেল।

একটা সময়ে গিয়ে অজিদের প্রয়োজন হয় ২৪ বলে ২১ রান। বল করতে আসেন মুজিব উর রহমান। সেই ওভার ডট দিয়ে শুরু করেন ম্যাক্সওয়েল। এরপর ৬, ৬, ৪– জিততে দরকার আর মাত্র পাঁচ রান। এদিকে ম্যাক্সওয়েলের ডাবল সেঞ্চুরি পেরোতে দরকার পাঁচ রান। পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় ও নিজের দ্বি-শতক দু’টিই পূরণ করেন এই অজি হার্ড-হিটার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে দ্বিশতক করে তিনি অপরাজিত থাকেন। তার ২০১ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে ১০টি ছক্কার পাশে রয়েছে ২১টি চার।