খেলা

অনলাইন গেইম কী আসলে জুয়া? নাকি এ থেকে আয় করা সম্ভব লাখ লাখ টাকা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩
অনলাইন গেইম কী আসলে জুয়া? নাকি এ থেকে আয় করা সম্ভব লাখ লাখ টাকা?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঘরে বসে আয়ের এক নতুন মাধ্যম হতে যাচ্ছে ই-স্পোর্টস বা অনলাইন গেমিং। ঘরে বসে মোবাইল অথবা কম্পিউটারে গেইম খেলেই আয় করা যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা !

প্রথাগত পড়াশুনার পাশাপাশি আধুনিক যে সমস্ত পেশা জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসছে, তার মধ্যে অন্যতম ই-স্পোর্টস বা অনলাইন গেমিং।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই একটি ভুল ধারনা অনলাইন গেমিং মানেই জুয়া ! কিন্তু ব্যাপারটি মোটেও সেরকম নয়।

জুয়া খেলায় মূলত নির্দিষ্ট পরিমানের অর্থ বা বস্তু নির্ধারণ করা হয়। তারপর কোনো একটি বিষয়ে দুই পক্ষ চুক্তি করে হার জিত নির্ধারণ করে। যে পক্ষ হেরে যায় সে অপর পক্ষকে সেই নির্ধারিত অর্থ বা বস্তু প্রদান করে।

অন্যদিকে ই-স্পোর্টস হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট। জুয়ায় উভয় পক্ষের সম্মতিতে পুরস্কারের অর্থ নির্ধারণ হয় এবং সময়ের সাথে সাথে তা কম-বেশি হয়।

কিন্তু ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রে পুরষ্কারের বিষয়টি নির্ধারিত থাকে এবং তা নির্ধারণ করে টুর্নামেন্ট আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও ই-স্পোর্টসে বিজয়ী দলকে পুরষ্কার প্রদান করে টুর্নামেন্ট আয়োজক কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে জুয়ার ক্ষেত্রে বিজয়ী দলকে পুরষ্কার প্রদান করে হেরে যাওয়া দল।
 
অনলাইনভিত্তিক কম্পিউটার কিংবা মোবাইল গেমিং টুর্নামেন্টগুলোকে বলা হয় ইলেকট্রনিক স্পোর্টস বা ই-স্পোর্টস।

পশ্চিমা দেশগুলোতে বড় বড় মিলনায়তন ও স্টেডিয়ামে জাকজঁমকভাবে এসব টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়।

টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া গেমারদের বলা হয় পেশাদার ই-স্পোর্টস প্লেয়ার। তারা দলগত কিংবা এককভাবে টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারেন।

সেই সাথে টুর্নামেন্ট চলাকালে কোনো কোনো দলকে নামি-দামি সব ব্র্যান্ড স্পনসর করে থাকেন, যা থেকেও মোটা আংকের টাকা আয় করা সম্ভব।

জনপ্রিয় ই-স্পোর্টস গেইম গুলোর মধ্যে রয়েছে League of Legends, Valorant, Fortnite, CS:GO, Player Unknown's Battlegrounds, Overwatch, Call of duty, FIFA ইত্যাদি।

তবে বর্তমানে ই-স্পোর্টস  ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ শুধুমাত্র খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং এখানে ডেভেলপার, থ্রিডি এনিমেটর, ভিডিও এডিটর, স্টোরিটেলার, অর্গানাইজার, ব্রডকাস্টার, কাস্টার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, অ্যানালিস্টসহ বিভিন্ন দক্ষতার প্রয়োগ করা সম্ভব।

গেমিং ভিডিও মেকিং ও স্ট্রিমিং করেও লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। সেই সাথে চাইলেই যে কেউ এসব ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা প্রয়োগ করে এই ইন্ডাস্ট্রিতে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। 

ই-স্পোর্টস হচ্ছে ফুটবল, ক্রিকেটের মতোই একধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলা। যেখানে একদল আরেক দল কে হারানোর জন্য খেলে থাকে, তবে সেই গেম টি ই-স্পোর্টস এর অন্তর্ভূক্ত হতে হবে। 

বিশ্বব্যাপী ই-স্পোর্টস এর জনপ্রিয়তা ও মার্কেট ভ্যালু দিনদিন বেড়েই চলেছে। এশিয়ান গেমসেও ই-স্পোর্টস এর জন্য আলাদা এক ক্যাটাগরি তৈরি করেছে। আর জাপানে তো ই-স্পোর্টস এর জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ই তৈরি করা হয়েছে।
২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বে ই-স্পোর্টস এর Market Value ছিল ১.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ১২ হাজার ৮৩৪ কোটি ৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা। প্রতি বছর এই ইন্ডাস্ট্রি ২১ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।




আশা করা যাচ্ছে ২০২৯ সাল নাগাদ পুরো ই-স্পোর্টস ইন্ড্রাস্ট্রি এর Market Value ৫.৪৮ বিলিয়ন  ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশি টাকায় যা দাড়ায় ৫৭ হাজার ৬৪৮ কোটি ১৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
এছারাও প্রতিযোগিতামূলক এসব গেমের মধ্য দিয়ে দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। দ্রুত পরিকল্পনা, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা।

খেলাধূলা ভিত্তিক ওয়েবসাইট প্যাভিলিয়ন এর এক প্রতিবেদন এ উল্লেখ করা হয়েছে, তরুণদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠা বিনোদনমূলক গেইমসকে জুয়ার শামিল করে নেতিবাচক একটি তকমা দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ই-স্পোর্টসকে নেতিবাচকভাবে অর্থাৎ জুয়ার নাম দিয়ে নিজেরাই দেশকে ও দেশের তরুণ সমাজকে পিছিয়ে দিচ্ছি।