বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। রবিবার (৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সভায় তিনি এ দাবি তোলেন।
ড. মাহমুদুর রহমানের মতে, ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিযোগে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, যদি এই দাবির বাস্তবায়ন না করা হয়, তাহলে তারা আরও কঠোর আন্দোলনের পথে নামবেন।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ড. মাহমুদুর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের সব মূর্তি অপসারণেরও দাবি তোলেন। তার মতে, এ ধরনের মূর্তি দেশের ইতিহাসের ভুল প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের মনোনয়ন বাতিলের উদ্যোগ নিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সায়মা ওয়াজেদ, যিনি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন, তাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উচ্চপদে নিয়ে যাওয়া নিয়ে মাহমুদুর রহমান আপত্তি তুলেছেন এবং এর পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থ দেখছেন।
ড. মাহমুদুর রহমান তার বক্তৃতায় আরও বলেন যে, ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন যে, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে ভারতের সঙ্গে গোপন চুক্তি হয়েছে, যা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ।
বিচারবিভাগ প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান অভিযোগ করেন, বিচারবিভাগ আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশেষ করে, ২০১২ সালে ঘটে যাওয়া ‘স্কাইপ কেলেঙ্কারি’র প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সেই সময়ের প্রধান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের গ্রেপ্তার হওয়া উচিত ছিল। তার মতে, সেই ঘটনা বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তিনি বাংলাদেশের মিডিয়াকেও সমালোচনা করেন, যেখানে ভারতীয় হেজেমনির প্রভাব স্পষ্ট বলে তিনি দাবি করেন। মৌলবাদ ও ইসলামি জঙ্গিবাদ নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া যে ন্যারেটিভ প্রচার করছে, তা দেশের প্রকৃত সমস্যাগুলোকে আড়াল করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মাহমুদুর রহমান আরও দাবি করেন যে, যমুনা সেতুর নাম পরিবর্তন করে শহীদ আবু সাইদ সেতু নামকরণ করা উচিত। শহীদ আবু সাইদ ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নাম শহীদ আবরার নামে নামকরণের দাবিও তিনি তোলেন। আবরার ফাহাদ ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী, যিনি ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের কিছু কর্মীর হাতে নিহত হন। আবরারের মৃত্যুতে দেশে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয় এবং ছাত্র সমাজের মধ্যে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে।
মাহমুদুর রহমানের এসব বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি এবং শেখ মুজিবের মূর্তি অপসারণের মতো বিষয়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলো মাহমুদুর রহমানের এসব দাবির পক্ষে সুর মেলাতে পারে, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি নিয়ে তার সমালোচনা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর কারণে।
মাহমুদুর রহমান সরকারকে ৭ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার দাবিগুলো বাস্তবায়িত না হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।