বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন অনেক দিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে—তিনি কবে দেশে ফিরবেন? বিশেষত, দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশ থেকে এই প্রশ্নের উত্তর জানার আকাঙ্ক্ষা দিন দিন বাড়ছে। তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন এবং তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো তাকে দেশে ফেরার পথে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। তবে তারেকের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সম্প্রতি আশ্বাস দিয়েছেন যে, তারেক রহমান যথাসময়ে দেশে ফিরবেন এবং আইনিভাবে তার সব মামলা মোকাবিলা করবেন।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীও মুক্তি পেয়েছেন। তবে তারেক রহমানের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি, ফলে তার দেশে ফেরা নিয়ে জটিলতা রয়ে গেছে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান, তারেক রহমান আইন ও আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। তার সব মামলা আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে এবং তারেক সময়মতো দেশে ফিরবেন। এই বক্তব্যে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে। ব্যারিস্টার কায়সার আরও জানান, তারেক রহমান সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই তাঁর দেশে ফেরার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে সম্প্রতি বিচার ব্যবস্থার রাজনৈতিককরণ নিয়ে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। দলটির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, কিছু বিচারপতি আদালতের নীতিমালা বা কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করেছেন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কাজ করছেন। বিএনপি বলছে, এসব বিচারপতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। গত শনিবার বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এই বিষয়ে বলেন, ‘বিচার বিভাগ কোনো রাজনৈতিক দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে পারে না। যারা কোড অব কন্ডাক্ট লঙ্ঘন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এবং আশা করি কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মূলত দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিংসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এই মামলাগুলো তাকে দেশে ফেরার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করছে। তবে বিএনপির আইনজীবীরা মনে করছেন, বিচার বিভাগ যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করে এবং কোনো রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে, তাহলে তারেক রহমানের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব হবে। তারেক রহমান সব মামলাতেই নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরাই নয়, পুরো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেই আলোচনা চলছে। একদিকে তারেক রহমানের সমর্থকরা মনে করছেন, তিনি দেশে ফিরে দলের হাল ধরবেন এবং বিএনপির নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করবেন। অন্যদিকে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তারেক রহমানের ফেরাকে একটি নতুন রাজনৈতিক অস্থিরতার সূচনা হিসেবে দেখছেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা বলছে, দেশের বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তারেক রহমানের মতো শীর্ষ নেতাদের বাইরে রাখতে এই প্রক্রিয়াকে কাজে লাগানো হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মহলকেও বিষয়টি নিয়ে অবগত করা হয়েছে এবং তারা আশা করছে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
বিএনপির রাজনীতিতে তারেক রহমানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং বিদেশ থেকে দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। তার দেশে ফেরার বিষয়টি দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, ২০২৪ সালের পরবর্তী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি যদি কোনো আন্দোলনে নামে, তাহলে তারেক রহমানের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তারেকের দেশে ফেরার পথের মূল চ্যালেঞ্জ হলো তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো, যা এখনও সমাধান হয়নি।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হলেও দলটির আইনজীবীদের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, প্রক্রিয়া এগোচ্ছে। তারেক রহমান দেশে ফিরে আসতে পারবেন কি না, সেটি নির্ভর করছে আইনি প্রক্রিয়ার উপর। বিএনপির নেতারা আশাবাদী যে, আইনগতভাবে সব জটিলতা দূর করে তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরবেন এবং দলের নেতৃত্ব দেবেন।