রাজধানী ঢাকায় সুইডেন, নরওয়ে এবং ডেনমার্কের তিনজন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠক করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। রবিবার (৬ অক্টোবর) সকালে ঢাকার গুলশানে সুইডিশ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই বৈঠকের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠকটি মূলত কূটনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রদূতেরা বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের উন্নয়ন নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বৈঠকে সুইডিশ রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরালড গুল ব্র্যান্ডসেন এবং ডেনমার্ক দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন অ্যান্ডার্স বি কার্লসেন উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ এবং দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকটি কেন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, তা বোঝা যায় বৈঠকের অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় থেকে। সুইডেন, নরওয়ে ও ডেনমার্কের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো সব সময়ই মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এদিকে, বিএনপি বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতার এক উত্তাল সময় পার করছে। এই প্রেক্ষাপটে, বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের বৈঠক নিঃসন্দেহে গুরুত্ববহ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, সেটি বেশ স্পষ্ট। বিশেষ করে ২০২৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান সরকারকে অবৈধ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থী হিসেবে বর্ণনা করে আসছে। দলটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছে।
বিএনপি মনে করছে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা ধারাবাহিকভাবে এই দাবি জানিয়ে আসছে এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে আনতে চেষ্টা করছে।
বৈঠকে মূলত বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, আসন্ন নির্বাচন এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। যদিও বৈঠকের পরে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি, তবে বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয় যে, এই ধরনের বৈঠক রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সমঝোতা ও পরবর্তী কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিএনপির এই বৈঠক থেকে বোঝা যায় যে, দলটি আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং রাজনৈতিক ইস্যুতে তাদের সমর্থন আদায় করতে তারা সক্রিয় রয়েছে।
সুইডেন, নরওয়ে এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতেরা এ বৈঠকে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলো সাধারণত মানবাধিকার, স্বাধীন নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়, ফলে এই বৈঠক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএনপি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এবং তাঁর মুক্তির দাবি নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চাপ রয়েছে। তাছাড়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়েও দলটির মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি ইতোমধ্যেই বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
কিন্তু, কূটনৈতিকভাবে এই ধরনের বৈঠক দলটির জন্য নতুন কৌশল তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এ ধরনের বৈঠকের পর বিএনপি আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভে আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দিতে পারে। বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতা যে শুধু স্থানীয় রাজনীতিতে নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে, তা এই বৈঠক থেকে বোঝা যায়।