ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আবু সাদিক একটি ভুয়া পোস্টের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ও তার সংগঠনের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ফেসবুক গ্রুপ ‘অপরাজেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার ফটো কার্ডের টেমপ্লেট ব্যবহার করে একটি মিথ্যা তথ্য পোস্ট করা হয়, যেখানে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ‘রগ কাটা’র মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
আবু সাদিক অভিযোগ করেন, গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় ‘অপরাজেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের ফেসবুক গ্রুপে দৈনিক প্রথম আলোর টেমপ্লেট ব্যবহার করে একটি ভুয়া ফটো কার্ড পোস্ট করা হয়। পোস্টটিতে লেখা ছিল, “শিবির এ পর্যন্ত যাদের রগ কেটেছে, তারা কেউ ঈমানদার ছিল না।” তিনি জিডিতে উল্লেখ করেন যে এটি একটি স্পষ্ট মিথ্যাচার এবং ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা, যা তার ব্যক্তিগত মর্যাদা এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সুনাম ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। সাদিক আরও বলেন, এই পোস্টটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়িয়ে তার এবং সংগঠনের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষ ও শত্রুতা সৃষ্টি করতে করা হয়েছে।
এই ভুয়া পোস্টটি ঢাবি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন মতের মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবু সাদিক। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এটি তার ব্যক্তিগত জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং তার ‘জান, মাল ও সম্মান’-এর ক্ষতি করতে পারে।
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ.কে.এম শাহাবুদ্দিন শাহীন জানান, আবু সাদিকের করা জিডি গ্রহণ করা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্তের জন্য সাইবার ক্রাইম ইউনিট কাজ করবে। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে তারা পোস্টটি কারা করেছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। পোস্টটি বেনামে করা হলেও সাদিক দাবি করেছেন যে, পোস্টকারী সেই গ্রুপের অ্যাডমিনদের পরিচিত বলে তিনি মনে করছেন।
এদিকে প্রথম আলো পত্রিকার টেমপ্লেট ব্যবহার করে করা ভুয়া ফটো কার্ডের বিষয়টি পত্রিকার নজরে আসার পর তারা নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে তারা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, ফেসবুকে ছড়ানো এই পোস্টটি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং এর সাথে প্রথম আলোর কোনো সম্পর্ক নেই। তারা এই ধরনের ভুয়া তথ্য প্রচারকে নিন্দা জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে আবু সাদিক এই মিথ্যা প্রচারণাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ। তার মতে, এর মাধ্যমে শুধু তার নয়, বরং ছাত্রশিবির এবং অন্যান্য দলমতের মানুষের মধ্যেও বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হলো যে, বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানোর বিষয়টি কতোটা ব্যাপক। এর আগেও রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা প্রচারণার ঘটনা দেখা গেছে, যা সমাজে বিভাজন ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে। সাইবার ক্রাইম ইউনিট ইতোমধ্যে বিভিন্ন গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে এই ধরনের অপরাধের বিস্তার প্রতিরোধে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন।