রাজনীতি

সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুলকে গ্রেপ্তারে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪
সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুলকে গ্রেপ্তারে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা
সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুরস্কার ঘোষণার ঘটনা রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি ফ্রান্স প্রবাসী এক আওয়ামী লীগ নেতা তার ফেসবুক প্রোফাইলে জিল্লুল হাকিমের গ্রেপ্তারের জন্য দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন, যা মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়।
আশরাফুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ফ্রান্স শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি, ফ্রান্স থেকে এই পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। তিনি তার পোস্টে উল্লেখ করেন যে, দেশের অন্যান্য এমপি বা মন্ত্রীদের গ্রেপ্তার তিনি চান না, তবে রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক এমপি জিল্লুল হাকিমের গ্রেপ্তার হলে র‌্যাব বা ডিবি সদস্যদের দুই লাখ টাকা পুরস্কার দেবেন। আশরাফুল ইসলাম দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকলেও দেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন নেতার দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সোচ্চার। বিশেষ করে রাজবাড়ী জেলার রাজনীতির সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং তিনি বিভিন্ন সময় এই জেলার নেতাদের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন।
জিল্লুল হাকিমের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি, অপহরণ, নির্যাতন, হত্যাচেষ্টা, এবং চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অভিযোগ। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর, রাজবাড়ীর আদালত এবং বালিয়াকান্দি থানায় তার ও তার ছেলের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলাগুলিতে তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ এবং নির্যাতনের পাশাপাশি, চাঁদাবাজির অভিযোগও আনা হয়। তবে এখন পর্যন্ত জিল্লুল হাকিম বা তার ছেলে আশিক মাহমুদ মিতুলকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
জিল্লুল হাকিমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নতুন নয়। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। বিশেষ করে, তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি অবৈধভাবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন এবং এসব অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে।
আশরাফুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলার রাজনীতির দুর্নীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি করে আসছেন। তিনি সামাজিক সেবামূলক কার্যক্রমেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন এবং এর আগেও মাদক ও সন্ত্রাস দমনের জন্য রাজবাড়ী জেলায় পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি মাদক ও সন্ত্রাস দমনে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে এসে দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশে নানা ধরনের পরিবর্তন এসেছে। রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে, এবং দুর্নীতির অভিযোগে একের পর এক নেতা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। তবে জিল্লুল হাকিম এবং তার ছেলে মিতুল এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলেছেন। এদিকে, ফ্রান্স থেকে দেওয়া পুরস্কারের ঘোষণা বিষয়টি আরও আলোচিত করে তুলেছে। স্থানীয় প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে সচেতন রয়েছে এবং যেকোনো সময় তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু হতে পারে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হচ্ছে। নতুন সরকার দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এবং এর ফলে বিভিন্ন স্তরের নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। জিল্লুল হাকিমও এর বাইরে নন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর তদন্ত চলছে, এবং জনগণের দাবি তাকে বিচারের আওতায় আনা।
ফ্রান্স প্রবাসী আশরাফুল ইসলামের পুরস্কার ঘোষণাটি জনমনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘোষণাগুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। জিল্লুল হাকিম এবং তার ছেলে মিতুলকে আইনের আওতায় আনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও অপেক্ষা করছে। এখন দেখার বিষয়, কবে এবং কীভাবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়, এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার কেমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।