ঢাকায় হাইকোর্ট–সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে ড্রাম থেকে রংপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। নিহতের বোন আনজিরা বেগম আজ শুক্রবার শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আশরাফুলের বন্ধু জরেজ মিয়াকে একমাত্র নামীয় আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর।
ওসি জানান, এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে হত্যাকারীদের শনাক্তের কাজ চলছে।
মর্গ থেকে মরদেহ গ্রহণ করতে এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েন আশরাফুলের বোন আনজিরা বেগম। তিনি বলেন, জরেজ মিয়া আমার ভাইকে খুন করেছেন। আমি জরেজের ফাঁসি চাই।
তবে হত্যার কারণ সম্পর্কে তিনি কোনো ধারণা দিতে পারেননি। তাঁর ভাষ্য, জরেজ গ্রেপ্তার হলেই প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে নীল রঙের দুটি ড্রাম থেকে খণ্ড খণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয় নিশ্চিত করা না গেলেও পরে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে জানা যায়, নিহত ব্যক্তি রংপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক (৪২)।
তিনি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রী, এক ছেলে (৭) ও এক মেয়ে (১০) রয়েছে।
স্বজনদের ভাষ্য, তিন দিন আগে মালয়েশিয়াফলত বন্ধু জরেজ মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে রংপুর থেকে ঢাকায় এসেছিলেন আশরাফুল। এরপর থেকে তাঁর নিজের মুঠোফোনে কল করলে সর্বদা জরেজই ফোন ধরছিলেন।
নিহতের বোন আনজিরা বলেন, মঙ্গলবার রওনা দেওয়ার আগে আশরাফুল জানিয়েছিলেন যে তারা নারায়ণগঞ্জে রয়েছেন এবং এক পাওনাদারের কাছে টাকা নিতে অপেক্ষা করছেন।
তিনি আরও বলেন, ভাই বলল, বাবাকে হাসপাতালে রিলিজ দিবে, টাকা দিয়ে দিয়েছি। তারপর থেকে ফোন দিলে জরেজই ধরছে। বলে ‘আশরাফুল কালেকশনে গেছে, ব্যস্ত আছে’।
স্বজনদের অভিযোগ, আশরাফুলের স্ত্রী লাকী বেগম বুধবার এবং বৃহস্পতিবার দু’দিনই স্বামীর ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। প্রতিবারই ফোন ধরেন জরেজ মিয়া, বলেন আশরাফুল ‘কাজে ব্যস্ত’।
পরদিন জরেজের স্ত্রীকে বিষয়টি জানাতে গেলে তিনি জরেজকে ফোন করেন। তখন জরেজ দাবি করেন, তিনি নাকি ড্রেন থেকে আশরাফুলের ফোন কুড়িয়ে পেয়েছেন।
এরপরই পরিবার শঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিকেলে বদরগঞ্জ থানায় গেলে তাঁরা জানতে পারেন, ঢাকায় নীল রঙের ড্রাম থেকে খণ্ড খণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। খবর পেয়ে রাতেই ঢাকায় রওনা হন তাঁরা। আজ সকালে মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।