আন্তর্জাতিক

ইমরান খানকে নীরব করতে পাকিস্তানি জেনারেলদের তৎপরতা জোরদার

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫
ইমরান খানকে নীরব করতে পাকিস্তানি জেনারেলদের তৎপরতা জোরদার
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে নিয়ে দেশে–বিদেশে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়ালেও পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বারবার তা অস্বীকার করছে। ২০২৩ সাল থেকে কারাবন্দী থাকা খানের সঙ্গে কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিবার বা আইনজীবীদের দেখা করার সুযোগ নেই, যা তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।

সরকার দাবি করছে, তিনি সুস্থ আছেন। কিন্তু পরিবারের সদস্য ও সমর্থকেরা তাঁর জীবিত থাকার বিশ্বস্ত প্রমাণ চাইছেন। এরই মধ্যে ইমরান খান ১৪ বছরের সাজা পেয়েছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ১৫০টির বেশি মামলা চলছে—রাষ্ট্রীয় উপহার আত্মসাৎ থেকে সেনা সদর দপ্তরে হামলার উসকানি দেওয়া পর্যন্ত নানা অভিযোগ। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে আরও দীর্ঘ সাজা ভোগ করতে হতে পারে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীদের কারাবরণ একটি দীর্ঘদিনের চিত্র। জুলফিকার আলী ভুট্টো থেকে শুরু করে প্রায় সব প্রধানমন্ত্রীই কখনো না কখনো কারাগারে গেছেন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে আপস ও নির্বাসন হয়ে ওঠে তাঁদের নিরাপদ পথ।

ইমরান খানের ক্ষেত্রেও একই পথ অনিবার্য ছিল বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। ক্ষমতায় ওঠার সময় যেসব জেনারেল তাঁকে সমর্থন করেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। ২০২৩ সালের সহিংস বিক্ষোভের পর সেনা সদর দপ্তরে হামলা তাঁর বিরুদ্ধে সামরিক অসন্তোষ আরও তীব্র করে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইমরান খানকে জনস্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে সরকার ও সেনাবাহিনীর তৎপরতা আরও স্পষ্ট হয়েছে- তার নাম উল্লেখে কিছু গণমাধ্যমে পরোক্ষ শব্দ ব্যবহার, পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ বন্ধ, গণমাধ্যমে তাঁর বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ।

করাচিতে, লন্ডনে এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর সমর্থকেরা বিক্ষোভ করলেও পাকিস্তানের মধ্যে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় অচল।

সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সাম্প্রতিক সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে আরও ক্ষমতা পেতে চলেছেন। নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে তাঁর অধীনে আনার উদ্যোগ, মেয়াদ তিন বছর থেকে পাঁচ বছর করা, এবং আজীবন মামলা থেকে অব্যাহতি—সব মিলিয়ে সামরিক প্রভাব আরও সুসংহত হয়েছে।

ফলে ইমরান খানের সঙ্গে আপস করার সম্ভাবনাও সংকুচিত হয়েছে। তাঁর বয়স ৭৩, এবং আপসের জন্য যে রাজনৈতিক হাতিয়ার প্রয়োজন—তা প্রায় নিঃশেষ।

দুই বছর কারাবন্দী থাকা সত্ত্বেও ইমরান খান এখনো দেশের সবচেয়ে জোরালো বিরোধী কণ্ঠ। দলের নেতা-কর্মী, আইনজীবী এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো তাঁর বক্তব্য জনসমক্ষে পৌঁছে দিচ্ছে। সরকার ও সামরিক শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতি নিয়ে তিনি এখনো সমালোচনামুখর।

তবে পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁর মুক্তি বা রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন এখন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।