বলিউড

সালমানকে হত্যার হুমকি, কে এই গ্যাংস্টার বিষ্ণোই?

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
সালমানকে হত্যার হুমকি, কে এই গ্যাংস্টার বিষ্ণোই?
লরেন্স বিষ্ণোই ভারতের অপরাধ জগতের অন্যতম আলোচিত নাম, যার কুখ্যাতি দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। ৩১ বছর বয়সী এই গ্যাংস্টার পাঞ্জাব থেকে তার অপরাধী জীবনের সূচনা করলেও বর্তমানে তার গ্যাংয়ের অপতৎপরতা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সক্রিয় এবং তার অপরাধমূলক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। বলিউড সুপারস্টার সালমান খানকে হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় বিষ্ণোইয়ের নাম বিশেষভাবে উঠে এসেছে, যা তাকে আরও বেশি আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
লরেন্স বিষ্ণোই চণ্ডীগড়ের একটি কলেজে পড়াশোনা করার সময় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং সেই সময় থেকেই অপরাধ জগতে তার পদার্পণ ঘটে। ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করার পর সহিংসতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন বিষ্ণোই। চণ্ডীগড়ের সেই কলেজে পড়ার সময়ই মারামারি এবং গোলাগুলির মতো ঘটনা তার পরিচিতি বাড়ায়। তার কুখ্যাতির শুরু এখান থেকেই, এবং ধীরে ধীরে সে আরও ভয়ংকর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে। ছাত্র রাজনীতি তাকে অপরাধ জগতের ভিত গড়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেয় এবং পরবর্তীতে সে তার নিজের গ্যাং তৈরি করে।
লরেন্স বিষ্ণোইয়ের নেতৃত্বাধীন গ্যাং বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে সক্রিয়। তার গ্যাংয়ে প্রায় ৭০০ সদস্য আছে, যারা পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং দিল্লিতে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিষ্ণোইয়ের অপরাধ জগতের প্রধান আয় উৎস হলো মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন ধরনের হত্যাকাণ্ড। তার বিরুদ্ধে ৩০টিরও বেশি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ১৯টি এখনও বিচারাধীন।
বিষ্ণোইয়ের গ্যাং এর সহযোগী হিসেবে কাজ করছে গোল্ডি ব্রার, যিনি কানাডা থেকে গ্যাং পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়। গোল্ডি ব্রার মূলত দূর থেকে পুরো গ্যাংকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং তার মাধ্যমেই ভারতের বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত হয়। কানাডার পুলিশ এমনকি দাবি করেছে যে ভারত সরকার খালিস্তানি নেতাদের টার্গেট করতে বিষ্ণোইয়ের গ্যাংকে ব্যবহার করছে, যদিও ভারত সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
২০২২ সালে পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসে ওয়ালার হত্যাকাণ্ডে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গ্যাং জড়িত ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এই হত্যাকাণ্ড তার অপরাধী জীবনের আরও একটি বড় ঘটনা হিসেবে গণ্য হয়। এছাড়া, সালমান খানকে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের জন্য হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিষ্ণোই সম্প্রদায় কৃষ্ণসার হরিণকে পবিত্র মনে করে এবং সেই কারণেই সালমান খানের বিরুদ্ধে বিষ্ণোই এই হুমকি দেন। ২০১৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে বিষ্ণোই সরাসরি ঘোষণা দেন যে তিনি সালমান খানকে হত্যা করবেন, কারণ তিনি কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করেছিলেন।
বর্তমানে লরেন্স বিষ্ণোই গুজরাটের একটি কারাগারে বন্দী থাকলেও, তার অপরাধমূলক কার্যক্রম একদমই থেমে নেই। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কারাগারে থেকেও বিষ্ণোই নির্বিঘ্নে তার গ্যাং পরিচালনা করছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে তার গ্যাং সদস্যরা সক্রিয়ভাবে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। কারাগারে থাকা অবস্থায়ই সে বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক অপারেশন পরিচালনা করেছে এবং তার প্রভাব অপরাধ জগতের ভিতরে অটুট রয়েছে।
লরেন্স বিষ্ণোই শুধুমাত্র অপরাধীরূপেই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তার প্রভাব ছড়িয়েছে। অনেক তরুণ তাকে অনুসরণ করে এবং তাকে অপরাধী জীবনযাপন এবং গ্ল্যামারের প্রতীক হিসেবে দেখে। তার জীবনযাপন পাঞ্জাবের সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতির একটি বিকৃত প্রতিফলন হিসেবে ধরা হয়, যেখানে অপরাধকে গ্ল্যামারাইজ করা হয় এবং ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে শক্তি অর্জনের চেষ্টা করা হয়।
বিষ্ণোইয়ের অপরাধমূলক কার্যক্রম এবং তার গ্যাংয়ের বিপুল শক্তি ভারতের পুলিশের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বিভিন্ন সময়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছে, তার অপরাধ জগতের কার্যক্রম একদমই থেমে নেই। লরেন্স বিষ্ণোইয়ের মতো অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে আনা এবং তাদের অপরাধমূলক কার্যক্রম থামানো ভারতের আইনি সংস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গল্প ভারতের অপরাধ জগতের অন্ধকার দিকের প্রতিফলন, যেখানে একজন কুখ্যাত গ্যাংস্টার ক্রমাগত অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনে ভীতি ছড়াচ্ছে।