বলিউডের বাদশাহ শাহরুখ খান, যিনি একসময় বিয়ের মঞ্চ মাতাতেন নাচে, এখন আর সেই আগের মতো বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচেন না। তার ভক্তরা দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষ্য করছেন এই পরিবর্তন। সম্প্রতি আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত আইফা অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪-এ শাহরুখ খান নিজেই জানালেন, কেন বিয়ের অনুষ্ঠানে আর তাকে নাচতে দেখা যায় না। একই সঙ্গে এই তারকা তাঁর জীবনের কঠিন সময়ের কথাও শেয়ার করেন, যা তাঁকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ করে দিয়েছে।
আইফা অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪-এর মঞ্চে শাহরুখ খান যখন জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলছিলেন, তখনই তিনি মজা করে জানান, কেন আর বিয়ের অনুষ্ঠানে তাকে নাচতে দেখা যায় না। তিনি বলেন, ‘আগে আমার জামাইয়ের বয়স ছিল, এখন আমি শ্বশুরের বয়সী। সেই কারণেই আর বিয়ের অনুষ্ঠানে তেমন নাচতে দেখা যায় না।’
এই মন্তব্যে একদিকে মজা থাকলেও অন্যদিকে এতে লুকিয়ে রয়েছে জীবনের বাস্তবতা। শাহরুখ খান এখন তিন সন্তানের বাবা—আরিয়ান, সুহানা এবং আব্রাম। সন্তানরা যখন বড় হয়, তখন জীবনের কিছু অভ্যাসও বদলে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারকারাও নতুন দায়িত্বের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেন।
শাহরুখ খানের জীবনেও এমন এক সময় এসেছে, যখন তাঁকে আর্থিক ও মানসিকভাবে ভীষণ চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। ২০২১ সালে শাহরুখ খানের বড় ছেলে আরিয়ান খান মাদককাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন এবং মুম্বাইয়ের একটি ক্রুজ পার্টি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরিয়ানের এই গ্রেপ্তারের ঘটনা শুধু শাহরুখের পরিবার নয়, পুরো বলিউডকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল। শাহরুখ খানের জন্য এটি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর একটি।
আরিয়ান প্রায় এক মাস কারাগারে ছিলেন, এবং সেই সময় শাহরুখ তাঁর ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনের চাপের মুখোমুখি হন। তবে সবসময় তার পাশে ছিলেন স্ত্রী গৌরী খান। সেই কঠিন সময়টিতে ‘জওয়ান’ সিনেমার শুটিংও চলছিল। শাহরুখ জানান, গৌরীর সমর্থনই তাঁকে এই পরিস্থিতি সামলাতে সাহায্য করেছিল। তিনি বলেন, ‘সিনেমা করতে গেলে প্রয়োজন অর্থের। এটা আমাকে কেউ মনে করিয়ে দিয়েছিল। তাই আমি গৌরীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। গৌরীই বোধ হয় একমাত্র স্ত্রী, যিনি স্বামীর জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করেন। আমাদের ক্ষেত্রে উল্টোটা সচরাচর হয় না।’
শাহরুখ খান বরাবরই পরিবারকে জীবনের মূল ভিত্তি বলে মনে করেন। আরিয়ানের মাদককাণ্ডের পর ছয় মাসের আইনি লড়াই শেষে আরিয়ানকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। এই পুরো ঘটনার পর শাহরুখ ও তাঁর পরিবার আরও কাছাকাছি এসেছে। শাহরুখ বিশ্বাস করেন, জীবনের কঠিন সময়ে পরিবারই হলো সবচেয়ে বড় আশ্রয়। গৌরী খান সেই সময় শাহরুখের মানসিক শক্তির সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে ওঠেন।
শাহরুখ খান তার সন্তানদের প্রতি কতটা নিবেদিত, তা তার বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়। তিনি সুহানা ও আরিয়ানের জন্য কতটা গর্বিত, সেটাও তিনি জানাতে ভোলেননি। এবার সুহানার সঙ্গে নতুন সিনেমায় কাজ করছেন শাহরুখ। সুজয় ঘোষ পরিচালিত ‘কিং’ সিনেমায় বাবা-মেয়েকে একসঙ্গে পর্দায় দেখা যাবে। এটি শাহরুখের জন্য একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা, কারণ তাঁর মেয়ে সুহানা খানের এটি প্রথম বলিউড ফিল্ম।
আইফা অ্যাওয়ার্ডসে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জয়ের পর শাহরুখ খান তার ভক্তদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তাঁর ভক্তরা সবসময় তাঁর পাশে থেকেছেন এবং তাঁদের ভালোবাসা ও সমর্থন ছাড়া এতদূর আসা সম্ভব হতো না। জীবনের কঠিন সময় পার করার পর শাহরুখ খান এখন জীবনের প্রতি আরও বেশি সচেতন এবং প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করেন।
শাহরুখের এই ব্যাখ্যা তার ভক্তদের আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে কেন তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানে আর নাচেন না। তিনি হয়তো এখন আগের মতো প্রতিটি সিনেমার প্রচারে ব্যস্ত নন, কিন্তু নিজের পরিবার ও ক্যারিয়ারকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য তার এই পরিবর্তন স্বাভাবিক।
শাহরুখ খানের পরবর্তী সিনেমা ‘কিং’, যেখানে তাকে এক ভিন্ন রূপে দেখা যাবে। এই সিনেমার পরিচালক সুজয় ঘোষ। ‘কিং’-এ প্রথমবারের মতো তাঁর মেয়ে সুহানা খানও বড় পর্দায় অভিষেক করতে চলেছেন। শাহরুখ এই নতুন যাত্রাকে ঘিরে বেশ আশাবাদী এবং মেয়ের সঙ্গে কাজ করার জন্যও ভীষণ উচ্ছ্বসিত।
শাহরুখ খান ভক্তদের মনে এখনও তার চিরন্তন ছাপ রেখে চলেছেন, এবং তার জীবনের গল্প ভক্তদের মাঝে অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তুলছে। শাহরুখ খানের এই বিনয়ী এবং মানবিক দিক তার জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, এবং তার জীবনের কঠিন সময়গুলো তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
শাহরুখ খানের জীবনযাত্রার পরিবর্তন, পারিবারিক মূল্যবোধ এবং নতুন প্রজন্মের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তুতি দেখে স্পষ্ট যে, তিনি শুধু সিনেমার কিং নন, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব।