টালিউড অভিনেত্রী নুসরাত জাহান দুর্গাপূজাকে ঘিরে নিজের অনুভূতি ও স্মৃতি শেয়ার করেছেন আনন্দবাজার অনলাইনের পূজা বিশেষ বিভাগ ‘তারকার পূজা’-তে। নুসরাতের মতে, বিশ্বাস কোনো ধর্মের ওপর নির্ভর করে না। এটি একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত যা প্রত্যেকের নিজস্বভাবে নির্ধারণ করা উচিত। এই বিষয়টি নিয়ে তিনি সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক ট্রলিংয়ের মুখোমুখি হলেও নুসরাত তা পাত্তা দেন না এবং তার নিজের জীবনের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন।
শৈশবের পূজার স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে নুসরাত জানান, দুর্গাপূজা মানেই ছিল ছুটি, আনন্দ আর সাজগোজ। ছোটবেলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তার মাসির বাড়ি বেহালায় পূজার সময় ভাইবোনদের সঙ্গে একসঙ্গে ঠাকুর দেখার স্মৃতি তার মনে টাটকা রয়ে গেছে। সেই সময়ে নতুন জুতার কষ্ট, খিদে—সবকিছু ভুলে ঠাকুর দেখার উন্মাদনায় মেতে থাকতেন তিনি। বিশেষ করে তার বাবা একবার তাকে বলেছিলেন যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি ক্লান্ত হবেন, ততক্ষণ ঠাকুর দেখতেই হবে, যা তার মনে আজও স্পষ্ট।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পূজার দিনগুলোর ধরণও বদলে গেছে নুসরাতের জন্য। এখন অতিথি হিসেবে তাকে বিভিন্ন পূজার অনুষ্ঠানে যেতে হয়। তবু চেষ্টা করেন ভিড় এড়িয়ে ঠাকুর দেখার জন্য। পূজার সময় রাস্তার ফাস্টফুডের স্টলগুলো তাকে আকৃষ্ট করে, বিশেষ করে ঘুগনির দোকান। তিনি একটি মজার ঘটনা উল্লেখ করেন, যেখানে তিনি যশকে না জানিয়ে ঘুগনি খাওয়ার জন্য গাড়ি থেকে নেমে পড়েন এবং পরে যশ ও ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সময় তার হাতে ঘুগনির প্লেট ছিল।
এই অভিনেত্রী আরও জানান, পূজার আগে তিনি ও তার স্বামী যশ দুজনেই কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকেন। তবে পরিবারের জন্য সময় বের করে ঠাকুর দেখা এবং কেনাকাটা করাটা তাদের একটি প্রিয় অভ্যাস। নুসরাতের ছেলে ঈশান, যিনি এখন সাড়ে তিন বছর বয়সী, পূজার সময় মণ্ডপের আলোকসজ্জা ও ঢাকের তালে নাচতে খুব পছন্দ করেন। এবারও নুসরাত তার ছেলেকে নিয়ে ঠাকুর দেখার পরিকল্পনা করেছেন।
নুসরাত জাহান পূজার অষ্টমীর ভোগ খাওয়ার একটি বিশেষ অভ্যাসের কথা উল্লেখ করেন, যা নিয়ে তাকে বহুবার কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে। তবে তার মতে, এ ধরনের কটাক্ষ বা সমালোচনা তাকে থামাতে পারে না। তিনি সবসময় অঞ্জলি দেবেন, কারণ তার বিশ্বাস কোনো ধর্মের ওপর নির্ভর করে না। বিশ্বাস হলো মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দ।
সামাজিকমাধ্যমে নারীদের অতিরিক্ত ট্রলিংয়ের প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি। নুসরাত মনে করেন, প্রত্যেকের তার নিজের মতো জীবনযাপনের স্বাধীনতা থাকা উচিত এবং অন্য কেউ সেই জীবনের শর্ত নির্ধারণ করতে পারে না। তাই তিনি এসব ট্রলিংকে গুরুত্ব দেন না।
পূজার সময় বিশেষ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে, তবে পূজার মেজাজ বা আনন্দ নষ্ট হয় না বলে বিশ্বাস করেন নুসরাত। তার শহর বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে, তাই তিনি দুর্গামায়ের কাছে সবাইকে শান্তি দেওয়ার জন্য প্রার্থনা করেন।
নুসরাতের মতে, পূজা হলো বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা বছরভর মানুষকে আনন্দ এবং ভালোবাসায় আবদ্ধ রাখে। তিনি আনন্দবাজারের পাঠকদের জন্য শারদীয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে তার লেখাটি শেষ করেন।