বিনোদন

চঞ্চলকে ‘গৃহবন্দি’ করার গুজব ভারতীয় গণমাধ্যমে, যা বললেন অভিনেতা

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
চঞ্চলকে ‘গৃহবন্দি’ করার গুজব ভারতীয় গণমাধ্যমে, যা বললেন অভিনেতা
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বাংলাদেশের বিনোদন জগতে একজন পরিচিত মুখ। তার অসাধারণ অভিনয়শৈলী ও জনপ্রিয়তা তাকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও পরিচিতি এনে দিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমে চঞ্চল চৌধুরীকে ‘গৃহবন্দি’ করার খবর ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘সংবাদ প্রতিদিন’ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দাবি করে যে চঞ্চল চৌধুরীকে বাংলাদেশে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৭ দিন আগে অভিনেতা নিউইয়র্কে যাওয়ার জন্য দুবাই ট্রানজিটে ঢাকা থেকে বিমানযাত্রা শুরু করেন। কিন্তু বিমানে ওঠার পর কয়েকজন ব্যক্তি তার কাছে জানতে চান, তিনি কি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। চঞ্চল তাদের জানান, তিনি কাজের জন্য নিউইয়র্কে যাচ্ছেন। এরপরই তাকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
সংবাদমাধ্যমটি আরও দাবি করে, এই ঘটনার পর থেকেই চঞ্চল চৌধুরীকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস বা চঞ্চল চৌধুরী কিংবা তার ঘনিষ্ঠ কারও বক্তব্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। তবুও এই খবরটি হিন্দুস্তান টাইমস, নিউজ ১৮-সহ আরও কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশি গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে চঞ্চল চৌধুরী গুজবটিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি আমার সঙ্গে। এই খবরের কোনো সত্যতা নেই। পুরোপুরি মিথ্যা। এমনকি গত কয়েক মাসে কোনও সাংবাদিকের সঙ্গেও আমার কথা হয়নি। কীভাবে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা হলো, তা আমার জানা নেই।’
চঞ্চল চৌধুরীর বক্তব্যের পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, গৃহবন্দি হওয়া বা বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়ার খবরটি পুরোপুরি মনগড়া। তিনি বর্তমানে স্বাভাবিকভাবেই নিজের কাজ এবং দৈনন্দিন জীবনযাপন করছেন।
চঞ্চল চৌধুরী সম্প্রতি কিছুটা নিভৃত জীবন যাপন করছেন, যা হয়তো গুজব ছড়ানোর একটি কারণ হতে পারে। আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় তার নীরব অবস্থানের জন্য সামাজিক মাধ্যমে কিছু সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। এই পরিস্থিতি হয়তো তার ওপর ভিত্তিহীন খবর রটানোর সুযোগ তৈরি করেছে।
গুজবের আরেকটি কারণ হতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিত্তিহীন তথ্য। সাধারণত জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নিয়ে গুজব দ্রুত ছড়ায় এবং তা যাচাই না করেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
এই ঘটনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা। চঞ্চল চৌধুরীর মতো একজন সুপরিচিত শিল্পীর বিষয়ে এমন সংবেদনশীল খবর প্রকাশের আগে সঠিক তথ্য যাচাই করা প্রয়োজন ছিল। কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র ছাড়াই এমন খবর প্রকাশ করা শুধু গুজব ছড়ানো নয়, বরং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সম্মানহানির কারণ হতে পারে।
চঞ্চল চৌধুরীর গৃহবন্দি হওয়ার গুজবের কোনো সত্যতা না থাকলেও, এটি তার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তবে তার সুস্পষ্ট বক্তব্যের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে।
এই ধরনের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সংবাদমাধ্যমে কোনো খবর দেখার আগে সেটি যাচাই করা জরুরি। একইসঙ্গে গণমাধ্যমগুলোর উচিত তথ্য যাচাই করে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে খবর প্রকাশ করা।
চঞ্চল চৌধুরী তার অভিনয় দক্ষতা এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে ভক্তদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তার মতো একজন শিল্পীকে নিয়ে ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ শুধু তাকে নয়, দেশের বিনোদন জগতের সুনামকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। ভবিষ্যতে এমন খবর ছড়ানোর আগে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।