শিক্ষা

অস্থায়ী ভবনে চলছে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান ও অফিসিয়াল কার্যক্রম

স্টাফ রিপোর্টারঃ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
অস্থায়ী ভবনে চলছে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান ও অফিসিয়াল কার্যক্রম
নেত্রকোনা প্রতিনিধি, বিজয় চন্দ্র দাস : প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের অস্থায়ী ভবনে চলছে নেত্রকোনা জেলা শহরের রাজুর বাজার সংলগ্ন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান ও অফিসিয়াল কার্যক্রম। উন্মুক্ত খেলাধুলার মাঠ, উপযুক্ত পাঠাগার, সেমিনার ও ক্যানটিন না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উন্নত শিক্ষার পরিবেশ থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। তবে কতৃপক্ষের দাবি আগামী শিক্ষাবর্ষে নিজস্ব জায়গায় কলেজ ক্যাম্পাস নির্মাণ সম্ভব হবে।আবাসিক হল না থাকায় শিক্ষার্থীরা থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরে মেসে ও ভাড়া বাসায়। এতে সময়ের অপচয়সহ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী শিক্ষাবর্ষে নিজস্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করে স্থায়ী ভবনে পাঠদান ও অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু করার  আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
 শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর গত অক্টোবরে সাত  বছর পূর্ণ হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন অনুষদে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫১৯ জন।শিক্ষক রয়েছেন ১৫ জন। তবে অনলাইনে ঢাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ পাঠদান করছেন নিয়মিত।যদিও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন এতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। ইচ্ছে করলেই অনলাইনে পাঠদানে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশ্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক বিষয় ভিত্তিক সমস্যা আছে সরাসরি শিক্ষকদের পাঠদান না হলে সমাধান সম্ভব নয় বলে জানান তারা।শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানটিতে কেবল শিক্ষার্থীই ভর্তি করা হয়েছে। অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। নানা অব্যবস্থাপনা আর সংকটের মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন কাটাচ্ছেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা। তবে প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রকল্প পরিচালক শুভ্র সরকার বলেন,এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৩ভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। করুনা ভাইরাসের মহামারী, উপকরণ মূল্য বৃদ্ধির জন্য ঠিকাদাররা কম লাভে কাজ করতে আগ্রহী নন। এতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, প্রধানমন্ত্রীর নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণীকক্ষ, আবাসন, গবেষণাগার, ক্যান্টিন, খেলাধুলা, শিল্প-সংস্কৃতিচর্চাসহ বিনোদনের কোনো ধরনের সুযোগ পাচ্ছেন না তারা। বিশেষ করে জেলার বাইরে থেকে আসা ছাত্রীরা প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে ভাড়া বাসায থেকে সময়মতো ক্লাসে যোগদান করতে পারছেন না। বাইরে থাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কষ্ট হচ্ছে।৭ বছর আগে ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নীতিমালা পাস করা হয়। ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর নেত্রকোনা পৌরসভার রাজুর বাজার এলাকায় টিটিসির একটি তিনতলা ভবনে যাত্রা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির। 
 ২০২২সালের ১ সেপ্টেম্বর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কবীর। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৫৬। তবে শূন্য শিক্ষক ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট মহল।বিশ্ববিদ্যালয় অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি ও পরের বছর থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি অনুষদের অধীন চারটি বিভাগের শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ৩১৫। তাদের মধ্যে ছাত্র ১৮৫ জন, ১৩০ জন ছাত্রী। আর শিক্ষক আছেন ১১ জন। তারা সবাই প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। চার বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যাপক, সহযোগী বা সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ দেয়া হয়নি।
 ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার আদিত্য জানান, বাজারে ইট, সিমেন্ট,রংবেরং মূল্য বৃদ্ধির কারণে ও গেল করোনা মহামারী আকার ধারণ করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত কাজের গতি কিছুটা পিছিয়েছে। অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক পদে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে অচিরেই এই সকল পোষ্ট নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে। তখন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও গবেষণা বিষয়ক কাজ সহজে সম্পন্ন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে একনেকে ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা অনুমোদন দেয়া হয়। সদর উপজেলার রামপুর, সাহিলপুর, গোবিন্দপুর, কান্দুলিয়া ও রায়দুমরুহি মৌজায় ২৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৫০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণ হওয়া ওই জায়গা নিচু হওয়ায় ৬৫ লাখ ঘনমিটার বালি ভরাটের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় ২৪০ কোটি টাকা। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরুজ্জামান খানকে কার্যাদেশ  দেয়া হয়। আগামী বছরের ২৭ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। তবে কাজের সময়সীমা ও উপকরণ মূল্য বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.গোলাম কবীর বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি।এসে জেনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশ সহযোগিতা করেন। নিজস্ব এলাকায়  পাঠদান, আবাসিক ভবনের  নির্মাণ কাজ চলছে। কাজ এগিয়ে চলছে।  পাঠদান ও আবাসিক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। আশা করছি আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনার ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।