সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ৮৯ নং কান্তনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন স্কুলে অনুপস্থিত থেকেও মাসের পর মাস বেতন-ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মুঞ্জুরুল ইসলামের (শিপন চাকলাদার) বিরুদ্ধে।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে সরকার পতনের পর থেকে মাস তিনেক মেডিকেল ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। অথচ সেই ছুটির পর থেকেই চলতি বছর ২০২৫ ইং জুন মাস পর্যন্ত প্রতিদিন হাজিরা খাতায় তার ‘উপস্থিতি’ দেখা যাচ্ছে।
সরেজমিনে গেলে বিদ্যালয়ের কয়েকজন স্টাফ জানান, হেড স্যার মাঝে মাঝে এসে অগ্রিম সাইন করে রেখে যান। আবার কেউ কেউ বলছেন, অফিসের চাবি তার কাছেই থাকে—তিনি রাতে এসে সাইন করে যান।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বলছে, “সরকার পতনের পর একদিনও হেড স্যার স্কুলে আসেননি।” স্থানীয় এক বিদ্যায়ের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “স্কুলে না এলেও এক সহকারী শিক্ষক মাঝে মাঝে হাজিরা খাতা নিয়ে গিয়ে সই করিয়ে নিয়ে আসেন।”
অভিযুক্ত মুঞ্জুরুল ইসলাম (শিপন চাকলাদার) নিষিদ্ধ ঘোষিত তেকানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, আগে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্কুলে এসে শুধু হাজিরা খাতায় সই করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতেন।তৎকালীন সরকার থাকাকালে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। শিক্ষা অফিসও তখন দেখেও না দেখার ভান করত।সরকার পরিবর্তনের পরেও তার সেই ‘অদৃশ্য প্রভাব’ বহাল রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে ওই ক্লাস্টারের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদের বিরুদ্ধে তিনি বিদ্যালয়টি সঠিক ভাবে তদারকি করেছে কি-না তা নিয়ে জনমনে উঠেছে বিভিন্ন প্রশ্ন।
মুঞ্জুরুল ইসলামের ( শিপন চাকলাদার) সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, “আমি মেডিকেল ছুটির আবেদন করেছি।" বিদ্যালয়টি তদারকির অভাব রয়েছে এমন প্রশ্নে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদের কাছ থেকে কোন সদ উত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে কাজিপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান সাফ জানিয়ে দেন, “এখনও আমি কোনো মেডিকেল ছুটির আবেদন হাতে পাইনি।”তিনি আরও জানান, বিষয়টি জানলাম খুব দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী, অভিভাবক এবং শিক্ষক সমাজ। প্রশ্ন উঠেছে— একজন শিক্ষক মাসের পর মাস স্কুলে না এসেও কীভাবে সরকারি বেতন পাচ্ছেন? কে দিচ্ছে তার হয়ে স্বাক্ষর? শিক্ষা অফিস কি জেনে বুঝেই নীরব?এই ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে স্থানীয়রা।