অপরাধ

হাজী সেলিমসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো রাকিব হত্যাকাণ্ড মামলায়

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪
হাজী সেলিমসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো রাকিব হত্যাকাণ্ড মামলায়
ঢাকা, ৭ অক্টোবর ২০২৪:রাজধানীর চকবাজারে ঘটে যাওয়া রাকিব হাওলাদার হত্যাকাণ্ডের মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমসহ তিনজনকে আজ গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ মামলায় অভিযুক্ত অন্য দুজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এবং সাবেক কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ প্রদান করেন।
গত ৫ আগস্ট, রাজধানীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৬ বছরের কিশোর রাকিব হাওলাদার নিহত হন। মিছিলটি যখন চানখারপুলে পৌঁছায়, তখন পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিলে গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই রাকিবের মৃত্যু হয়। আন্দোলনটি বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিল, যেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের অধিকার ও ন্যায়বিচারের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন।
রাকিবের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন, যিনি তার ছেলের জন্য বিচার চেয়েছেন, হাজী সেলিমকে এ ঘটনায় এক নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করেন। রাকিবের মৃত্যুতে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে এবং তার পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলাটি বহুল আলোচিত হয়।
হাজী সেলিমসহ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আগে, গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বংশাল এলাকা থেকে হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তানভীর হাসান সৈকতকে ১৪ আগস্ট রাজধানীর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় আত্মগোপনে থাকার সময় গ্রেপ্তার করা হয় এবং মানিককে ২২ আগস্ট লালবাগ থানার কেল্লার মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চকবাজার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মোরাদুল ইসলাম এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তদন্তের ভিত্তিতে, আদালতে হাজির হয়ে তিনি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করেন এবং তিনজনকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
রাকিবের মৃত্যু নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে, ছাত্রলীগের নেতা তানভীর হাসান সৈকতের গ্রেপ্তার বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ছাত্র সমাজের একাংশ দাবি করছে, ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব মিছিলের সময় অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নির্দেশ দেয়, যা রাকিবের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
রাজনৈতিক মহলেও এ ঘটনার প্রভাব পড়েছে। বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করেছে যে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এবং তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার করছে এবং ছাত্র আন্দোলনের মত ন্যায্য দাবিকে দমন করছে। এ নিয়ে সংসদে তুমুল বিতর্ক হয়েছে, যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছিল।
আদালতের পরবর্তী শুনানিতে মামলার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হবে। মামলার তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগসমূহ তদন্ত শেষে আদালতে উপস্থাপন করা হবে। তবে, রাকিবের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে অস্বীকার করে হাজী সেলিমের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই সাফাই দেওয়া হয়েছে। তার আইনজীবীরা দাবি করছেন যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এই মামলার প্রভাব শুধু বিচারব্যবস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচিত হতে থাকবে।