সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গড়ে উঠছে ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অধিকাংশ ভাটা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমি দখল ও কাঠ পোড়ানোর কারণে পরিবেশ, কৃষি এবং জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় নিবন্ধিত ইটভাটা আছে ১৭টি। অথচ পুরো জেলার ভাটার সংখ্যা ২১৩। বাকি ১৯৬টি ভাটা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চলছে। ভেড়ামারা, দৌলতপুর, কুমারখালী ও খোকসায় কিছু বৈধ ভাটা থাকলেও কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর উপজেলায় সবকটিই অবৈধ।
অবৈধ ভাটাগুলোর মধ্যে রয়েছে অটো, জিগ-জ্যাগ, ড্রাম ও ফিক্সড চিমনি পদ্ধতির ভাটা। এর মধ্যে ২১টি ভাটার মালিক হাইকোর্টে রিট করায় সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না পরিবেশ অধিদপ্তর।
আইনে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রায় সব ভাটা ৩–৪ একর উর্বর কৃষিজমি দখল করে স্থাপন করা হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই নদীর চর ও আবাদি জমি থেকে মাটি কেটে ইট তৈরির কারণে জমির উৎপাদনক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
গ্রামবাসী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইটভাটার ধোঁয়া-ছাই ফসল পোড়াচ্ছে, মানুষের অসুখ বাড়াচ্ছে। কাঠ পোড়ানোর জন্য আশপাশের গাছও কেটে ফেলছে তারা।
বৈধ ভাটার একজন মালিক বলেন, সিন্ডিকেট, তদবির আর প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই অবৈধ ভাটাগুলো বন্ধ হয় না। রিটও বড় বাধা।
পরিবেশ গবেষক গৌতম কুমার রায় জানান, দেশে প্রায় ১০ হাজার ভাটার মধ্যে চার হাজারই অবৈধ। অধিকাংশ ভাটায় কাঠ পোড়ানো হয়, এতে প্রতিবছর প্রায় ২৫০ লাখ মেট্রিক টন কাঠ ধ্বংস হচ্ছে। বায়ুদূষণ বাড়ছে, টপ সোয়েল নষ্ট হয়ে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। তিনি পরিবেশ বাঁচাতে ব্লক ইট বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেন।
ইটভাটা মালিক সমিতির একাংশের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলীর দাবি, বাংলাদেশে কোনো ভাটারই বাস্তবে পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। আমরা সবাই নিয়মিত রাজস্ব দিচ্ছি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ইমদাদুল হক বলেন, অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ধাপে ধাপে সব ভাটায় অভিযান হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, পর্যায়ক্রমে সব ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হবে। তবে কবে নাগাদ এই অভিযান সম্পূর্ণ হবে—সে বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট কোনো সময় জানাননি।