কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। নদী, হাওড় এবং খাল-বিল অধ্যুষিত এই অঞ্চলে সরিষার খেত যেন প্রকৃতির বিছানো এক হলুদ গালিচা। এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই প্রকৃতিপ্রেমীরা ভিড় করছেন। সরিষার ভালো ফলন কৃষকদের মুখে তৃপ্তির হাসি এনে দিয়েছে, আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
সরিষা চাষ কৃষকদের জন্য কম খরচে অধিক লাভজনক। ধান বা অন্যান্য খাদ্যশস্য চাষে বেশি বিনিয়োগের পরও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা সরিষার দিকে ঝুঁকছেন। কার্তিক মাসের শেষের দিকে শুরু হওয়া সরিষা চাষ পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফসল তোলার মাধ্যমে শেষ হয়। বিশেষ করে হাওড় অঞ্চলে বোরো ধান কাটার পর এবং নতুন মৌসুমের আগের ফাঁকা সময়ে সরিষা চাষের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়।
কৃষকেরা সরিষাকে ‘ফাউ’ ফসল হিসাবে উল্লেখ করেন। এর কারণ, এটি চাষে খরচ কম এবং তেলের চাহিদা থাকায় বাজারে দাম ভালো। বর্তমানে সরিষার প্রতি মন বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। সরিষা ফুল শুধু তেল উৎপাদনের কাঁচামাল নয়; এটি দিয়ে মুখরোচক বড়া ও শাক রান্না হয়। এছাড়া, সরিষা গাছের কাণ্ড শুকিয়ে জ্বালানি হিসাবেও ব্যবহার করা হয়, যা বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দেয়।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, এ বছর জেলায় ১৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরিষা চাষ শুধু অর্থনৈতিক সুবিধাই আনছে না, বরং এটি মাটির উর্বরতা বাড়াতেও সাহায্য করে। ফসলের ঘনঘন চক্রের ফাঁকে চাষ করা এ ফসল চাষিদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সরিষার চাষ বাড়াতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে দেশের ভোজ্য তেলের ঘাটতি কমাতে ভূমিকা রাখবে।
সরিষার এই সাফল্য কেবল কৃষকদের জন্যই নয়, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরিষা ক্ষেতের হলুদ গালিচা কিশোরগঞ্জের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকদের নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।