প্রবাস

ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২
ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ

ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান। ইতিমধ্যেই  বন্যার পানিতে  ডুবে গিয়েছে দেশটির এক তৃতীয়াংশ অঞ্ছল। নদীর প্রচন্ড স্রোত ও পাহাড়ী ঢলের কারনে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে উদ্ধার কাজ।

দেশটির বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়াদের হেলিকপ্টারে করে সড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো ত্রান কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে ।

এ অবস্থায় বন্যার্তদের সহযোগিতায় প্রায় ১০০০ কোটি পাকিস্থানি রুপি তহবিল ঘোষানা করেছে সরকার। 

দীর্ঘ এই বন্যায় প্রান হানী বেড়ে দাড়িয়েছে ১ হাজার ৬১ জন। পার্বত্য অঞ্ছলগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এই অঞ্ছল গুলোতে পাহাড়ী ঢলের চাপ এতটাই বেশি যে, প্রবেশ করতে পারছে না কোন জলজান।

তাই হেলিকপ্টার দিয়েই চলছে উদ্ধার অভিযান। গেল কয়েকদিনের প্রলঙ্কয়ী বন্যা এবং ভুমিধসে ভেঙ্গে পড়েছে দেশটির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

ভুমিধসের শিকার হয়ে ধংস হয়েছে প্রায় দেড়শ সেতু। একইসাথে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার রাস্তা। 

পুরো পাকিস্থান থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে খাইবার- পাখতুন প্রদেশ । গেল রবিবারও সেখানে ধসে পড়ে নতুন করে দশটি সেতু। একই চিত্র বেলুচিস্তান এবং সিন্ধু প্রদেশেও।

সাম্প্রতিক বন্যায় দেশটিতে প্রায় ২০  লাখ একর ফসলি জমি তলিয়ে গিয়েছে।  প্রত্যন্ত অঞ্ছলগুলোয় আটকে পড়েছে লাখো লাখো মানুষ।

সরকারি হিসাবমতে দেশটির ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত। যা তাদের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ। 

ন্যশনাল ডিসাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথোরিটি জানিয়েছে উদ্ধার কাজ চালানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।  

তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির। বন্যা নিয়ন্ত্রনে সীমিত সামর্থ্য সত্তেও লোকবল এবং অবকাঠামোগত সার্বিক সহয়তা করছে পাকিস্তান আর্মি। 

একদিকে অর্থনৈতিক সংকটে হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তান সরকার, তার উপর ভয়াবহ বন্যা যেন মরার উপর খাড়ার গা। 

সরকারে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের তহবিল সরিয়ে এনে বৃদ্ধি করা হচ্ছে ত্রান কার্যক্রম। ফলে হুমকিতে পড়েছে সেসব প্রকল্পের ভবিষ্যত।

পাকিস্তান সরকার ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে সাহায্যকারী সংস্থা, বন্ধু দেশ এবং বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর নিকট । 

এরই মধ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আরো বেশ কিছু দেশ। 

ইতিমধ্যেই বন্যা তহবিলে প্রায় ১ হাজার কোটি রুপি সহয়তার ঘোষানা দিয়েছে সরকার।

এই বিশেষ সহয়তা দেওয়া হয়েছে খাইবার - পাখতুন খাওয়া প্রদেশের জন্যে। এক সপ্তাহের মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিটি পরিবারকে দেওয়া হবে ২৫,০০০ রুপি করে।

সরকার বলছে অর্থের অভাবে উদ্ধার কিংবা ত্রান কার্যক্রম চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে । জরুরি ভিত্তিতে দরকার আইএমএফ এর মতো বিশ্ব দাতা সংস্থার সহয়তা।

এদিকে পাকিস্থানের ভয়াবহ বন্যায় শোক পালন করছে ভ্যাটিকান সিটি। পোপের নেতৃত্বে আয়োজিত হয়েছে বিশেষ প্রার্থনার। 

পোপ ফ্রান্সিস পাকিস্থানকে সহয়তার জন্যে আহবান করেছে আন্তর্যাতিক সম্প্রদায়ের নিকট। পাকিস্তানের এই বন্যাকে বলা হচ্ছে গত ১০০ বছরে সবচেয়ে সবচেয়ে ভয়াবহ।

বৈশ্বিক পরিবেশ দুষন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি এই বন্যার। পাকিস্তানের প্রতিবেশি দেশ চীন এবং আফগানিস্থানকেও মোকাবেলা করতে হচ্ছে ভয়াবহ বন্যা।