বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে এবং নির্বাচনী পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাবও উঠেছে। বিশেষ করে প্রস্তাবিত আনুপাতিক নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ স্পষ্ট।
বর্তমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের ৩০০ আসনে সরাসরি ভোটে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। তবে আনুপাতিক পদ্ধতিতে দেশের প্রতিটি দলের মোট প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে তাদের সংসদে আসন নির্ধারিত হবে। অর্থাৎ সরাসরি নির্বাচনের পরিবর্তে, প্রতিটি দলের ভোটের শতাংশের ভিত্তিতে সংসদে তাদের আসন নির্ধারণ করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি দল ৩০০ আসনের মধ্যে ৪০% ভোট পায়, তবে তারা ১২০টি আসন পাবে।
জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কিছু ছোট দল এই পদ্ধতিকে সমর্থন করছে। তাদের দাবি, আনুপাতিক পদ্ধতিতে ছোট দলগুলো তুলনামূলক বেশি আসন পেতে পারে। যেমন, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৪০.৮৬% ভোট পেয়ে ১৯৩টি আসন পেলেও আনুপাতিক পদ্ধতিতে এই সংখ্যা কমে ১২৩ হতে পারতো। ফলে বিরোধী দলগুলোর গুরুত্ব বাড়তো এবং ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণ বেশি হতো।
জামায়াতে ইসলামীর মতে, এই পদ্ধতি সংসদকে গণতান্ত্রিক ও প্রতিনিধিত্বশীল করবে। দলটির আমির ড. শফিকুর রহমানের দাবি, আনুপাতিক নির্বাচনে প্রতিটি ভোটের প্রতিফলন স্পষ্ট হবে এবং জনগণের প্রকৃত মতামত সংসদে জায়গা পাবে। তার মতে, এই পদ্ধতিতে নির্বাচিত সংসদ হবে "কোয়ালিটি পার্লামেন্ট" এবং বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের দরকার।
আনুপাতিক নির্বাচনের বিরোধিতায় রয়েছে বিএনপি। দলটির মূল্যায়ন অনুযায়ী, সারাদেশে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি ও সমর্থন থাকায় প্রচলিত নির্বাচনে তারা জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দলের ভেতরে আশঙ্কা আছে যে, আনুপাতিক নির্বাচনে তাদের আসন সংখ্যা কমে যেতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, বাংলাদেশে আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করার মতো প্রস্তুতি নেই এবং এর জন্য পুরো রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
আওয়ামী লীগ বর্তমানে বড় একটি ভোট ব্যাংক ধরে রেখেছে। দলটি ১৯৭৩ থেকে শুরু করে বিভিন্ন নির্বাচনে ৩০% বা তার বেশি ভোট পেয়েছে। অনেকের মতে, আনুপাতিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দলটির বর্তমান পরিস্থিতি এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা থাকায় এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট নয়।
গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, এবি পার্টির মতো ছোট দলগুলো মনে করে আনুপাতিক নির্বাচনী পদ্ধতি ছোট দলগুলোর জন্য সহায়ক হবে। তবে তাদের মধ্যেও আশঙ্কা আছে, সারাদেশে জনপ্রিয়তা না থাকলে তারা হয়তো সংসদে জায়গা পাবে না। তবে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক মনে করেন, আনুপাতিক পদ্ধতি সরকারের স্বৈরাচারী হওয়ার প্রবণতা কমাবে এবং বিরোধী দলগুলোর গুরুত্ব বাড়াবে।
আনুপাতিক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেও এ বিষয়ে এখনও রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন একটি নির্বাচন পদ্ধতি চালু করতে রাজি হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশে নতুন পদ্ধতি কার্যকর করতে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন, যা বর্তমানে বেশ জটিল বলে মনে করা হচ্ছে।