বাংলাদেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর পুরো এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে সচিবালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে প্রবেশ করলেও বিদ্যুৎ না থাকায় কাজ শুরু করতে পারছেন না।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) মধ্যরাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট প্রায় ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে অগ্নিকাণ্ডের কারণে পুরো সচিবালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিছু স্থানে জেনারেটর চালু থাকলেও অধিকাংশ ভবন বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানান, আমরা রাত ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯টি ইউনিট কাজ করেছে। তবে ভবনের ভেতরে গাড়ি প্রবেশের সীমাবদ্ধতার কারণে কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত সচিবালয়ের বেশিরভাগ দপ্তর তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় কম্পিউটার, ফাইল প্রসেসিংসহ অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের কক্ষে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে দাঁড়িয়ে বা বসে সময় কাটাচ্ছেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, আগুনের সূত্রপাতের কারণ এখনও নিশ্চিত নয়। তবে এটি নাশকতা কিনা তা তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় দুঃখজনক একটি ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী, যিনি পানির পাম্প থেকে পাইপে সংযোগ দিচ্ছিলেন, রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী একটি ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, শ্রম ও কর্মসংস্থান, যুব ও ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগ রয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার কারণে এসব দপ্তরের কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের ডিজি জাহেদ কামাল জানান, "আগুনের প্রকৃত কারণ জানতে তদন্ত চালানো হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচিবালয়ে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ জরুরি।
এই ঘটনার পর সচিবালয়ের কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত দাপ্তরিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ঘটনাটি প্রশাসনিক কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।