জাতীয়

হাসিনাকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে ভারতকে: ড. ইউনূস

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪
হাসিনাকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে ভারতকে: ড. ইউনূস
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তার মতে, ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে শেখ হাসিনা ভারত থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, যা উভয় দেশের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে। তিনি বলেছেন, হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ভারতকে অবশ্যই তাকে ফেরত দিতে হবে।
ড. ইউনূস সতর্ক করেছেন যে, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে না দিলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা কঠিন হবে। তার ভাষায়, “বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে হলে হাসিনার বিষয়টি সমাধান করতে হবে।” সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন এবং দলটিকে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন।
ড. ইউনূসের মন্তব্যের পেছনে মূল প্রেক্ষাপট হল বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসিনার প্রত্যাবর্তন ও বিচারের মুখোমুখি হওয়া উভয় দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করেন ড. ইউনূস।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস তার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এখনো সাক্ষাৎ না হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এখনো মোদির সঙ্গে দেখা হয়নি। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আমি উপস্থিত থাকলেও মোদি সেখানে ছিলেন না। বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনেও আমরা দুজন উপস্থিত হতে পারিনি। তবে এই পরিস্থিতি বদলাবে। আমরা কেবল প্রতিবেশী নই, আমাদের ইতিহাস, ভূগোল, ভাষা ও সংস্কৃতি আমাদের একত্রিত করেছে। মোদির সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ সময়ের ব্যাপার।”
ড. ইউনূস দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) পুনরুজ্জীবিত করার পক্ষে জোরাল অবস্থান নেন। তিনি বলেন, “সার্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সেতু হতে পারে। ভারত ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কারণে সার্কের কার্যক্রম স্থগিত থাকা উচিত নয়। আমরা একটি রেজুলেশন পাস করে ভারত-পাকিস্তানের বিষয়গুলো এজেন্ডা থেকে বাদ দিতে পারি, কিন্তু সার্ককে কার্যত অকার্যকর করে দেওয়া যাবে না।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারত বিমসটেক ও বিবিআইএন উদ্যোগের মাধ্যমে সহযোগিতা করছে। তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “বিমসটেক বা বিবিআইএনের মতো উদ্যোগ কার্যকর হলে সার্ক কেন নয়? আমাদের যত বেশি সম্পর্ক ও সহযোগিতা থাকবে, ততই আমাদের আঞ্চলিক শক্তি বাড়বে।”
সার্কের কর্মকাণ্ড ২০১৬ সালে সন্ত্রাসবাদের অজুহাতে স্থগিত রাখা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, “যদি আমরা সম্পর্কের শর্ত হিসেবে সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয়গুলো সামনে রাখি, তাহলে কোনো সম্পর্কই টিকে থাকবে না। দুই দেশের (ভারত ও পাকিস্তান) সম্পর্কের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলো কেন ভুগবে?” তার মতে, দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলো আলাদা রেখে সার্ককে সক্রিয় রাখা সম্ভব।
ড. ইউনূসের মন্তব্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন এবং তার দলের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এদিকে, সার্ক পুনরুজ্জীবিত করা এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস করা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
ড. ইউনূসের বক্তব্য শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, দক্ষিণ এশীয় রাজনীতির জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। শেখ হাসিনার বিষয়টি সমাধান এবং সার্ক পুনরুজ্জীবনের মধ্য দিয়ে একটি নতুন আঞ্চলিক অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।