বাংলাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, বরাবরই বিভিন্ন ইস্যুতে তার প্রতিবাদী অবস্থানের জন্য পরিচিত। সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূচনা থেকেই তিনি দৃঢ়ভাবে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সমর্থন জানিয়ে আসছেন। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। শুক্রবার রাতে ফারুকী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন যেখানে তিনি ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন। এতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ফারুকী তার পোস্টে লেখেন, বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন 'সময়' থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন। তার মতে, আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাজ করে যাওয়া সংগঠনসমূহ— সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, এবং শর্ট ফিল্ম ফোরাম— নতুন প্রজন্মের কাছে আজ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তাদের অবস্থান নিয়ে ফারুকী প্রশ্ন তুলেছেন এবং ইতিহাসের দৃষ্টিতে এই অবস্থান কিভাবে বিচার করা হবে, সেই প্রশ্নও রেখেছেন। তিনি এই প্রসঙ্গে হিটলারের আমলের প্রসঙ্গ টেনে আনেন, “হিটলারের সময়ে কোনো শিল্পী যদি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে না গিয়ে তাকে সমর্থন করত, তাহলে ইতিহাস তাকে কিভাবে মনে রাখত?”
ফারুকীর মতে, কোনো শিল্পীর উচিত নয় ফ্যাসিস্ট বা মানবতাবিরোধী অপরাধের পক্ষে অবস্থান নেওয়া। রাজনৈতিক মতাদর্শ যে কোনো দলীয় হতে পারে, তবে শিল্পীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গণহত্যা, গুম বা নিপীড়নের মতো অপরাধের সাথে জড়িত থাকা উচিত নয়। তার ভাষায়, “আপনি আওয়ামী লীগ সমর্থক হতে পারেন, বিএনপি সমর্থক হতে পারেন, কিন্তু শিল্পী হিসেবে ফ্যাসিজমের পক্ষে কথা বলতে বা সম্মতি উৎপাদন করতে পারেন না।” গত ষোলো বছরে এই তিনটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ফারুকী আরও বলেন, তিনি বিপ্লবী ভাই-বোনদের প্রতি সম্মান রেখে বলেন যে, কোনো ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে আঘাত করা বা সহিংসতার প্রতি তার কোনো সমর্থন নেই। তবে এই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে এখনও রক্তের দাগ শুকায়নি এবং অপরাধীদের বিচার শুরু হয়নি। তাই বিভিন্ন উস্কানিতে পড়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেটি নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি। তার বক্তব্যে তিনি জনগণকে খুনিদের ফোনালাপ শোনার পরামর্শ দেন এবং এই আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ফারুকীর দৃষ্টিতে অপরাধীরা এখনো কোনো অনুশোচনা অনুভব করছে না বরং আরও খুনের উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে।
তার ভাষায়, “বিপ্লবের পরে একটি কুলিং পিরিয়ড বা শীতল হওয়ার সময়কাল থাকা উচিত। না হলে এই অবস্থায় আমি লিবারাল ক্রিটিকের জায়গা কিভাবে পাব?” ফারুকীর এই মন্তব্য মূলত দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিল্পীদের অবস্থান এবং দায়বদ্ধতার প্রশ্নকে সামনে তুলে ধরে। তিনি মনে করেন, একটি দেশের রাজনীতিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত, এবং এটি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে গণমানুষের পক্ষে কথা বলা প্রয়োজন।
ফারুকীর বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিয়ে তার উদ্বেগ এবং এর পেছনে চলা ষড়যন্ত্রের বিষয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তা স্পষ্টতই সাম্প্রতিক রাজনীতির অনিশ্চয়তার ছাপ বহন করে। তিনি মনে করেন, শিল্পী এবং সংস্কৃতিকর্মীদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের জন্য সমাজে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ প্রয়োজন। এই অবস্থায়, যারা প্রগতিশীলতার পক্ষে, তাদের প্রতি তার আহ্বান যে তারা যেন নিজেদের নীতিতে অবিচল থেকে সমাজের পরিবর্তন ও উত্তরণে কাজ করে যান।