বিনোদন জগতের প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা রিপন হাওলাদারের জীবনে বর্তমানে কঠিন সময় চলছে। একসময় চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তবে বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং শিল্প জগতের অস্থিরতার কারণে শুটিং বন্ধ থাকায় বহু কর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। সংসার চালাতে ঢাকার উত্তরা এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করছেন রিপন, যিনি ২৫ বছর ধরে এই পেশায় আছেন।
রিপনের মতে, এমন পরিস্থিতির জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। অভাব–অনটনে সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে তাকে এই নতুন পেশায় নামতে হয়েছে। তার ভাষায়, “প্রোডাকশন ম্যানেজারদের কোনো স্বীকৃতি নেই। এখন আমি রাস্তায় সবজি বিক্রি করি, তাও ঠিকমতো টিকে থাকা যাচ্ছে না।” রিপনের মতো প্রোডাকশন ম্যানেজার কামরুলও চার সন্তান নিয়ে কঠিন সংগ্রামের মধ্যে রয়েছেন। তার মতে, এমন পরিস্থিতিতে নিজের ও পরিবারের চাহিদা পূরণ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
অপর এক প্রোডাকশন ম্যানেজার আবদুল জানান, করোনার সময় যেমন সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল, বর্তমানে তেমন কিছুই নেই। করোনাকালে বাচ্চার দুধ ও নিজেদের ডালভাতের সংস্থান হলেও এখন কেউ তাদের দুঃখের কথা শুনছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
প্রোডাকশন ম্যানেজার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্যমতে, সংগঠনের ৮০ শতাংশের বেশি সদস্য বর্তমানে বেকার। সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ২৫০ জন হলেও, মাত্র ২০-৩০ জনের হাতে কাজ রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলেছে। বেকার সদস্যরা চা-পানের দোকান, সবজি বিক্রি এবং মোটরসাইকেল চালানোর মতো পেশায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু জাফর জানান, জুলাই মাস থেকে শুটিং কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকায় প্রোডাকশন টিমের সদস্যরা চরম সংকটে রয়েছেন। দেশের অন্য সেক্টরগুলো ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও প্রোডাকশন ম্যানেজাররা শুটিংয়ে ফেরার সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি বলেন, “শুটিং কার্যক্রম পুনরায় চালু না হলে আমাদের সদস্যদের জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে উঠবে।”
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিনোদন জগতেও প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে প্রোডাকশন ম্যানেজার ও ক্রুদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। এই পরিস্থিতিতে শুটিং বন্ধ থাকা ও জীবিকা হারানোর কারণে প্রোডাকশন ম্যানেজারদের অনেকেই হকার, ভ্যানচালক এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন।