অর্থনীতি

আড়াই কোটি টাকায় যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন জয়

উপ-সম্পাদক

উপ-সম্পাদক

শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪
আড়াই কোটি টাকায় যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন জয়
সজীব ওয়াজেদ জয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে, প্রায় আড়াই কোটি টাকার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে। নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে লবিস্ট নিয়োগের চুক্তির কাগজপত্রও সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের যাচাই-বাছাইয়ে এর সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির প্রভাবশালী লবিং ফার্ম স্ট্রাইক গ্লোবাল ডিপ্লোম্যাসি (এসজিডি)-কে নিয়োগ দিয়েছেন জয়। চুক্তিটি গত ১২ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত হয় এবং এর আওতায় জয় ২ লাখ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি ৩৯ লাখ ৯ হাজার ৩৮০ টাকার বিনিময়ে এসজিডির সঙ্গে ছয় মাসের জন্য এ চুক্তি করেন। চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হল মার্কিন নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী ও বিচার বিভাগের কাছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা। চুক্তিটি সজীব ওয়াজেদ জয়ের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ওয়াজেদ কনসাল্টিং ইনকরপোরেশনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
এ লবিং ফার্মটি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করেছে এবং বলা হচ্ছে, এ উদ্যোগের লক্ষ্য হল যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ট্রাম্পের সমর্থন পেতে আওয়ামী লীগের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে সমর্থন জোগাড় করা। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এ ধরনের চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগকে নতুনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে।
জয়ের এই পদক্ষেপের পেছনে কারণ হিসেবে তার সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার কথা বলা হচ্ছে। শেখ হাসিনার ভারতে চলে যাওয়ার পর দলের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে বা কারাগারে থাকলেও জয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সক্রিয় রয়েছেন। তিনি প্রায়ই ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন বিবৃতি দিয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থিরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং এ পরিস্থিতি রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
উল্লেখযোগ্য যে, বিএনপি-জামায়াত সরকার আমল থেকেই বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি সরগরম। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, বিএনপি-জামায়াত বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছে। তারা একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রমাণ উপস্থাপন করেছে বলে দাবি করেছে। তাই লবিস্ট নিয়োগ ইস্যুতে উভয় দলের মধ্যে লড়াই অনেক আগে থেকেই চলমান।
এদিকে, দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতির মধ্যেও দলটি দেশের জনগণের পাশে আছে বলে তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ৩ অক্টোবর প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের মাটিতে অন্য কোনো দেশের পতাকা উড়তে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আরেকটি স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ হবে।”
এ বিবৃতির মাধ্যমে দলটি সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো আন্তর্জাতিক ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তারা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটি যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের লবিস্ট নিয়োগের খবর এবং আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক বিবৃতি বাংলাদেশে রাজনীতির উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে, যেখানে একদিকে বিদেশি প্রভাবের আশঙ্কা এবং অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।