রংপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল তার বন্ধু জরেজুল ইসলাম ও জরেজের প্রেমিকা শামীমা আক্তার ওরফে কোহিনুর (৩৩)। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আশরাফুলকে ঢাকায় এনে খুন করে মরদেহ ২৬ টুকরা করার অভিযোগ উঠেছে এই দুইজনের বিরুদ্ধে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন এসব তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, গত ১৪ নভেম্বর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বড় বিজরা এলাকা থেকে শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, প্রায় এক মাস আগে শামীমা আক্তার আশরাফুলের সঙ্গে মিথ্যা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাদের মূল পরিকল্পনা ছিল ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে অবৈধ সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১০ লাখ টাকার মধ্যে ৭ লাখ নেবে জরেজ, আর ৩ লাখ নেবে শামীমা।
শামীমা আশরাফুলকে অচেতন করতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তার ভিডিও ধারণ করেন বলে র্যাবের দাবি।
১১ নভেম্বর রাত ৮টায় ব্যবসায়িক পাওনা আদায়ের কথা বলে জরেজের সঙ্গে রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন আশরাফুল। পরদিন সকাল থেকে তিনি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট সংলগ্ন পানির পাম্পের কাছে নীল রঙের দুটি ড্রাম থেকে খণ্ড খণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে তা আশরাফুল হকের বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। নিহতের বোন আনজিরা বেগম শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, গত ১২ নভেম্বর দুপুরে শামীমার দেওয়া ঘুমের ওষুধে অচেতন থাকা অবস্থায় আশরাফুলের হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে জরেজ। তারপর হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
পরের দিন ১৩ নভেম্বর জরেজ চাপাতি ও দুটি ড্রাম কিনে মরদেহ ২৬ টুকরায় বিভক্ত করে ড্রামে ভরে হাইকোর্টের পাশে ফেলে দেন। এরপর শামীমা কুমিল্লায় পালিয়ে যান।
র্যাব জানায়, শামীমার তথ্য অনুযায়ী হত্যায় ব্যবহৃত দড়ি, স্কচটেপ, রক্তমাখা পোশাক ও হাফ প্যান্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের দাবি, ঘটনার মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থ আদায়। তবে ব্যক্তিগত শত্রুতা বা আগের কোনো বিরোধ জড়িত ছিল কি না, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে ডিবি পুলিশের একটি দল ঘটনাটির মূল আসামি জরেজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে।