বাংলাদেশ

গোয়ালন্দের চমচম: রসে সেরা, স্বাদে সেরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪
গোয়ালন্দের চমচম: রসে সেরা, স্বাদে সেরা!
চমচমের কথা শুনলে কার না জিভে জল আসে! তারপরে যদি হয় সেই রাজবাড়ীর ভেজালের চমচম! তাহলে তো কথাই নেই! ছোট-বড় সব বয়েসি মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকে- এই চমচম।

পদ্মা কন্যা খ্যাত গোয়ালন্দ উপজেলার ভেজালের চমচম দেশ ও দেশের বাইরে কদর বেড়েই চলছে। 

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় ভরত মিষ্টান্ন ভান্ডারের তথা (ভেজালের)  চমচমের কথা তো সবারই জানা। কেবল নামেই নয়, আকৃতি আর স্বাদ-গন্ধেও এই মিষ্টি সেরাদের সেরা। ঐতিহ্য আর বাংলার লোক-সংস্কৃতির ইতিহাসের উত্তরাধিকার রাজবাড়ী জেলা। জানা যায়, গোয়ালন্দের এই চমচমের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আনুমানিক প্রায় ১ শত বছরের পুরোনো ইতিহাস।

ইতিহাস বলছে, ব্রজবাসি মন্ডল অরফে (ভেজালে মন্ডল) নামে এক ব্যক্তি স্বাধীনতার পূর্ব থেকে পদ্মা নদীর পাড়ঘেষা গোয়ালন্দ বাজারে পদ্মা নদীর পানি ও গরুর দুধ দিয়ে প্রথমে চমচম তৈরি শুরু করেন। পরে সেখানেই মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বর্তমান তার ছেলেরা এই ভরত মিষ্টান্ন ভান্ডারে দশ প্রকারের মিষ্টান্ন তৈরি করছে। ক্ষীর চমচম, রসগোল্লা, কালোজাম, রাজগোল্লা, রসমালাই, মালাইকারি , সর মালাই , বেবি সুইটস, মিষ্টি দই, বরফি সন্দেশ ইত্যাদি। 

বর্তমানে ‘গোয়ালন্দ মিষ্টিপট্টি’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া ভরত মিষ্টান্ন ভান্ডার।  

এই বাজারে প্রায় ১০টি মিষ্টির দোকান রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানেই এখন গড়ে উঠেছে, চমচমের দোকান। চমচমের গড়ন অনেকটা লম্বাটে। হালকা আঁচে পোড় খাওয়া বলে রঙটা তার গাঢ় বাদামি। বাইরেটা একটু শক্ত হলেও এর ভেতরের অংশ একেবারে নরম আর রসে টইটম্বুর। লালচে গোলাপি আভাযুক্ত ভেতরের নরম অংশের প্রতিটি কোষ কড়া মিষ্টিতে পূর্ণ। ঘন রস আর টাটকা ছানার গন্ধমাখা এ মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয়। সুস্বাদু চমচম তৈরির মূল উপাদান দুধ, চিনি, পানি, সামান্য ময়দা ও এলাচ দানা।


সরেজমিন দেখা যায়, এই সুস্বাদু চমচম তৈরির কাজে জড়িত ১০ জন কারিগর কাজ করছেন। আগুনের তাপে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে জ্বাল হচ্ছে চমচমের। 

বর্তমানে চমচম বিক্রি হচ্ছে, মান ৩৫০ ভেদে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লোকজন ছুটে আসেন এই ভেজালের নাম খ্যাত মিষ্টির দোকানে ঐতিহ্যবাহী চমচমের স্বাদ নিতে।

মিষ্টি কিনতে আসা ক্রেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ সিদ্দিকুর রহমান হীরা বলেন, গোয়ালন্দের মিষ্টি আমাদের ঐতিহ্য ও আমাদের গর্বের। বাজারে আসলে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য মিষ্টি কিনে নিয়ে যাই। ছোট বড় সবাই এই মিষ্টি পছন্দ করেন।

মিষ্টি কিনতে আসা আরেকজন গ্রাম পুলিশ বলেন, মিষ্টির সুনাম শুধু দেশেই নয়, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। আমি যেমন মিষ্টির জন্য এসেছি, আমার মতো অনেকেই এই মিষ্টি নিতে এসেছেন। এই মিষ্টির স্বাদ অন্যরকম! না-খেলে বোঝা যাবে না।

মিষ্টি ব্যবসায়ী ভরত মন্ডল বলেন, আমাদের গোয়ালন্দ ঐতিহ্য চমচম। প্রায় ১শত বছর আগে থেকেই এই মিষ্টি তৈরি হয়ে থাকে। এই মিষ্টির সুনাম দেশ ও দেশের বাইরে রয়েছে।এই চমচমে ভেজাল কোনো কিছু যুক্ত করা হয় না। চমচম স্বাদ হওয়ার কারণ খাঁটি দুধ, ছানা ও ময়দা দিয়ে চমচম তৈরি করা হয়। এজন্য এত স্বাদ! প্রতিদিন  ১ মণ মিষ্টি তৈরি করা হয়।


তিনি বলেন, আমার স্বর্গীয় বাবা ভেজালে মন্ডল নামের পরিচিত ছিল এলাকায়। তিনি  মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন। বাবার হাত ধরেই মিষ্টির ব্যবসায় আসা। আমি করছি। আমরা তিন ভাই এই পেশায় আছি।  এখানকার দুধ অনেক ভালো হয় আর জলেরও একটা বিষয় আছে! দুধ, জল ও কারিগরের সমন্বয়েই এই মিষ্টির স্বাদ হয় অন্যরকম। মিষ্টিগুলো খুবই প্রাকৃতিক। এই মিষ্টি তৈরিতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না।