রাজনীতি

জাতীয় স্বার্থে যে কোনো দলের সঙ্গে জোট করতে প্রস্তুত এনসিপি: আখতার হোসেন

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয় স্বার্থে যে কোনো দলের সঙ্গে জোট করতে প্রস্তুত এনসিপি: আখতার হোসেন
গণঅভ্যুত্থানের পর তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে তাদের প্রধান দাবি এখনো সংস্কার ও গণহত্যার বিচার। দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজন হলে আমরা যে কোনো দলের সঙ্গে জোট করতে প্রস্তুত।

সম্প্রতি বেসরকারি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম - কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আখতার হোসেন দলীয় কাঠামো, সংস্কার কার্যক্রম, নির্বাচনভিত্তিক কৌশল ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক জোট গঠনের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। 

আখতার হোসেন বলেন, আমরা ছাত্রজীবনে যে আন্দোলন শুরু করেছিলাম, তার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা। ২৪-এর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান ঘটিয়ে জনগণ একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

তিনি জানান, এনসিপি স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সংগঠন গড়ে তুলেছে। তরুণ থেকে প্রবীণ সব বয়সী মানুষ আমাদের দলে যুক্ত হচ্ছেন, বলেন তিনি।

অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, সরকার বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পেরেছে, যা এক অভূতপূর্ব অর্জন। তবে নাগরিক সেবা ও বিচার ব্যবস্থায় আমরা যে অগ্রগতি আশা করেছিলাম, তা হয়নি।

তিনি মনে করেন, কিছু ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্রের জটিলতা ও আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নির্বাচন বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান করা। এই দুটি ধাপ সফলভাবে বাস্তবায়িত হলেই আমরা নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেব।

তিনি জানান, দলটি ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছে, ইউনিয়ন পর্যায়েও কাজ চলছে। জনগণের সমর্থন পাচ্ছি, এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে, বলেন তিনি।

সম্ভাব্য জোট সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আমরা নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। তবে দেশের স্বার্থে প্রয়োজন হলে আমরা যে কোনো দলের সঙ্গে জোট করতে প্রস্তুত। বর্তমানে কারও সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।

তিনি বিএনপির কাছে ৫০টি আসন চাওয়ার গুঞ্জনকে “ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দেন।

আখতার হোসেন বলেন, এনসিপি পলিসিনির্ভর, মধ্যমপন্থী ও সম্প্রীতির রাজনীতি করতে চায়। আমাদের লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করা, যাতে জনগণ নির্বিঘ্নে সেবা পায়।

দলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনই আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য।

ভারত সম্পর্কিত প্রশ্নে আখতার হোসেন বলেন, ভারতের জনগণের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। সমস্যা দিল্লির বাংলাদেশ নীতিতে- যেখানে তারা এককভাবে একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করেছে। ভারত যদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়, তবে নীতিগত পরিবর্তন আনতেই হবে।

যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, সামাজিক কাজ করেছেন এবং মানবতার পক্ষে ছিলেন, তারাই আমাদের দলের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী। আমরা এমন মানুষদেরই সামনে আনব যারা পরিবর্তনের জন্য নিবেদিত।

বাংলাদেশকে নতুনভাবে বদলে দেওয়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখেছি, সেটিকে বাস্তবে রূপ দিতে এনসিপি কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সমর্থন ও অংশগ্রহণেই পরিবর্তন সম্ভব। — আখতার হোসেন