বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শহিদ আবু সাঈদের দুই ভাই রমজান আলী ও আবু হোসেন সম্প্রতি বসুন্ধরা গ্রুপের চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। বুধবার রাতে আবু হোসেন নিজেই মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে তারা মঙ্গলবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ই-মেইল ও ডাকযোগে চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠান।
গত ৯ অক্টোবর তাদের বসুন্ধরা গ্রুপের রংপুর ব্যুরোতে কর্মসংস্থান মিলে। রমজান আলী বাংলাদেশ প্রতিদিন ব্যুরোতে এবং আবু হোসেন নিউজ ২৪ চ্যানেলে জ্যেষ্ঠ নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু চাকরি পাওয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যে তারা অব্যাহতি নেন। চাকরি ছাড়ার কারণ হিসেবে আবু হোসেন জানান, "আমরা অফিসে নিয়মিত সময় দিতে পারছি না। সংসারের ব্যস্ততার কারণে এ সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় মাস শেষে বেতন নেওয়াটা আমাদের বিবেকবোধের পরিপন্থী। তাই আমরা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্যের অভিযোগ নিয়ে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনটি প্রথমদিকে স্থানীয় হলেও ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। আবু সাঈদের মৃত্যুর পর তার পরিবারের ওপর অনেক চাপ তৈরি হয়, এবং অনেকেই এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারি দলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হন। আন্দোলনের মাত্রা বাড়ার ফলে সরকারি নীতির পরিবর্তন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি ওঠে।
আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এর পর থেকে সারা দেশে নতুন করে এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা হয়, যেখানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে অনেকেই দেশের সাধারণ মানুষের অধিকারের আন্দোলন হিসেবে সমর্থন করেন। বিভিন্ন মহল থেকে নিহত আবু সাঈদকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহিদ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
এই আন্দোলনের প্রভাবে সারা দেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং সব ধরনের বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে শহিদ আবু সাঈদের ভাইয়েরা চাকরি পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করায় অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে। আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আবু সাঈদের পরিবারে যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, তা এক মাসের চাকরিতে স্থায়ী হতে না পারার কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, রমজান আলী ও আবু হোসেনের চাকরি ছাড়ার ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এবং আন্দোলন কর্মীরা তাঁদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং বলেন যে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রভাবে অনেকেই চাকরি ও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছেন। সমাজে সচেতনতা ও পরিবর্তনের জন্য তাঁদের অবদান স্মরণ করে দেশের নতুন প্রজন্ম এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
আবু সাঈদের পরিবারের ওপর সরকারের চাপে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তাঁদের দায়িত্ব পালনে অসুবিধা হওয়ায় তারা চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন।